গ্রন্থটিতে ইতিহাসে ফাতিমি নামে পরিচিত উবায়দি রাফিজি সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের আলোচনা করা হয়েছে। মূলে তারা শিয়া ছিল বিধায় আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে শিয়াদের বিভিন্ন দল-উপদল এবং উম্মাহর ধ্বংসসাধনে তাদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে উত্তর আফ্রিকায় বাতিনি সাম্রাজ্যের সফলতার কারণগুলো উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হয়েছে। রাফিজি ও আহলুস সুন্নাতের মধ্যকার দ্বন্দ্বের স্বরূপ স্পষ্টরূপে তুলে ধরা হয়েছে। সুন্নি মুসলিম তথা আহলুস সুন্নাতের বিরুদ্ধে রাফিজিদের বিভিন্ন অপকৌশল ও তা প্রতিরোধে আহলুস সুন্নাতের গৃহীত পদক্ষেপের কথা সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে। এ সাম্রাজ্যের তিনটি রাজধানী ছিল। প্রথমে তিউনিসিয়ার মাহদিয়া শহর (৯০৯-৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ)। তারপর তিউনিসিয়ার কায়রাওয়ানের কাছে অবস্থিত আল মানসুরিয়া শহর (৯৪৮-৯৭৩) এবং সর্বশেষ মিসরের কায়রো (৯৭৩-১১৭১)। উবায়দুল্লাহ মাহদির হাতে এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবির হাতে এর পতন ঘটে। উবায়দুল্লাহ ছিল ফাতিমি সাম্রাজ্যের প্রথম শিয়া রাফিজি খলিফা। উবায়দি সাম্রাজ্য ধ্বংসে উত্তর আফ্রিকাবাসীর বিরাট আন্দোলন-সংগ্রাম এবং রাফিজিদের বিরুদ্ধে আহলুস সুন্নাতের অনুসারী আলিমদের অস্ত্রধারণ ও ইসলামি তালিম-তারবিয়াত তথা শিক্ষাদীক্ষা প্রচার-প্রসারে তাঁদের ভূমিকার কথাও সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০