মানুষের পরস্পরের মধ্যে মনের ভাব-ভাবনা বিনিময়ের জন্য প্রতীক আরোপিত সাংকেতিক ধ্বনিকে আমরা ভাষা বলি। বিরূপ প্রকৃতির মাঝে নিছক বেঁচে থাকার প্রয়োজনে যে জোটবদ্ধ জীবনযাপন সে শুরু করেছিল, ওই যোগাযোগের মাধ্যম articulated speech বা ‘ভাষা’ surviving tools হিসেবে কাজে লেগেছে। ইশারা-ইঙ্গিতের মুদ্রায় ক্রমান্বয়ে ধ্বনি যুক্ত হয়ে আরো স্পষ্ট ও অর্থপূর্ণ হয়েছে তা। অন্ত্যজ প্রাণীরাও আলাদা শব্দ ব্যবহার করে। বানর দল বিশটি শব্দ দিয়ে দিনভর আড্ডা দিয়ে চলে। বিবর্তনের ধারায় প্রথম দিকের সরল মানুষের অভিধানে হয়তো ‘তিনশ’ শব্দই ছিল। তা দিয়ে মানুষ কাজ কিংবা অকাজের কথা বলেছে, আড্ডা দিয়েছে, গল্প করেছে। এরপর আড্ডা আর গল্প যত বেড়েছে, ভাষা ব্যবহারের দক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার বিকাশে সভ্যতা এগিয়ে চলেছে তরতরিয়ে। মানুষ গল্প করে তার অভিজ্ঞতা আর কল্পনার বিষয় নিয়ে। আর তা নানা ঢঙে আর রূপবন্ধে প্রকাশিত হয়। প্রকাশভঙ্গিতে ছোটোগল্প সাহিত্যের অধুনা অথচ প্রিয় সংযোজন। মহাকাল মহাজগতে নিত্য যে মহাকাব্য লিখে চলেছে তাতে অন্তর্লীন রয়েছে অগণন একক জীবনের ছোটো ছোটো অসংখ্য আখ্যান। বৃহত্তর ঘটনাপ্রবাহে ঘটনামাত্রার তুল্যমূল্য বিবেচনায় কোনোটি মুখ্য-মূল্যবান, কোনোটি একেবারেই গৌণ-অকিঞ্চিৎকর। কিন্তু ব্যক্তির যাপিত জীবনে পলে পলে তৈরি হওয়া গল্পগুলোর সমষ্টিই তার মহামূল্যবান মহাজীবন। মানুষ কেবল তারই মতো জীবনযাপন করতে পারে- এটিকে সীমাবদ্ধতা হিসেবে বিবেচনা করলে অপর একটি জীবন কিংবা তার মনস্তত্ত্বকে চেনা-জানার- বোঝার সুযোগ পাওয়া কম আনন্দের বিষয় নয় নিশ্চয়। এ গল্পগ্রন্থে বিধৃত বেশ কয়েকটি চরিত্র, তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া বিষয়াবলি কিংবা তাদের অন্তর্জগতের খানিক অংশের পরিভ্রমণ সহৃদয় পাঠকদের ভালো লাগবে বলেই আমার বিশ্বাস।