মুফতী মুহাম্মদ তকি উসমানী। শুধু উপমহাদেশ নয়, আরব দুনিয়াসহ সারা পৃথিবীর মুসলমানের কাছে সমাদৃত এক প্রিয় মনীষী। জন্ম ১৯৪৩ ঈ. সাহারানপুর, ভারত। গবেষক এ আলেম দাওরায়ে হাদীস শেষ করেন পাকিস্তানের দারুল উলুম করাচি থেকে। একই প্রতিষ্ঠান থেকে ইসলামী আইনশাস্ত্রে (আল-ফিকহুল ইসলামী) উচ্চতর গবেষণাও সম্পন্ন করেন। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবী সাহিত্যে এম এ ও করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। হাদীসের ইজাজত লাভ করেন উপমহাদেশের বরেণ্য মুহাদ্দিস ইদরীস কান্ধলভী, শায়খুল হাদীস যাকারিয়া, মুফতী মুহাম্মদ শফী ও মুফতী রশিদ আহমদ (রহ.) প্রমুখের পাশাপাশি আরবের শায়খ হাসান মাশাত থেকে। পাকিস্তানের ফেডারেল শরীয়া কোর্টে বিচারক ছিলেন ১৯৮০-১৯৮২ সাল পর্যন্ত। ১৯৮২-২০০২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়া আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে তাঁকেই বর্তমানে সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্মীয় লেখক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আরবী, উর্দু, ইংরেজী তিন ভাষাতেই অবিরাম লিখে চলেছেন। হাদীস ও ফিকাহশাস্ত্রে অনন্য প্রতিভার অধিকারী এ মনীষীর এক অনবদ্য রচনা- তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম (৬ খণ্ডে সমাপ্ত মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ) মধ্যপ্রাচ্যসহ সর্বত্রই সমানভাবে সমাদৃত। ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন তাঁর পিতা মুফতী মুহাম্মদ শফী (রহ.) কর্তৃক ৮ খণ্ডের বিখ্যাত উর্দু তাফসীরগ্রন্থ মাআরিফুল কুরআন। পবিত্র কুরআনে কারীমের ইংরেজী অনুবাদ করেছেন ২ খণ্ডে। ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র-মুসলমানের জীবনের সবদিক নিয়েই লিখেছেন তিনি। ২০০৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী তাঁকে সম্মাননা প্রদান করেন। তিনি জিদ্দা সৌদি আরব কেন্দ্রিক ইসলামী আইন সংস্থা- মাজমাউল ফিকহিল ইসলামির স্থায়ী সদস্য। দারুল উলূম করাচির ভাইস প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদীস।
প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ও ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, ও 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।