আরবি কথাসাহিত্যে আধুনিকতার সূচনা ঘটেছে ঘাসান কানাফানির লেখনীসূত্রে। প্রকৃতপক্ষে, ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সাহিত্য সৃজনের মাধ্যমে এই আধুনিকতার সূত্রপাত। ফিলিস্তিনি কথাসাহিত্যিক, কবি, চিত্রকর, নাট্যকার, বুদ্ধিজীবী এবং রাজনীতিক ঘাসান কানাফানি তাঁর কথাবস্তুর মাধ্যমে, য্যামোন মাহমুদ দারবিশ তাঁর কবিতায় কিংবা তাঁদের যোগ্য উত্তরসূরি গত ২০২৩-এর ০৭ ডিসেম্বর ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত কবি রেফাত আলারিরসহ পরবর্তীকালের ফিলিস্তিনি সাহিত্যিকদের সৃজনচর্চায় এই প্রতিরোধ সাহিত্য আরো গতিশীল হয়েছে। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন দখল এবং ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইলের মধ্যে নতুন আরেকটা যুদ্ধে ইসরাইল মহাপরাক্রমে সিরিয়া ও মিশরের অনেক স্থান দখল করে নেয়ার পর থেকে মূলত এই প্রতিরোধ সাহিত্যের সূচনা ঘটে। দখলদার ইহুদিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগ্রামের যৌক্তিকতা তুলে ধরা, একইসঙ্গে ইসরাইলকে প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি নিয়ে সর্বদা সোচ্চার থাকা প্রতিরোধ সাহিত্যধারার মূল প্রবণতা। প্রতিরোধ মানে হচ্ছে কলরব সৃষ্টি করা। কথা, গান, নাটক, গল্প, কবিতাসহ সব শিল্পমাধ্যম ব্যবহার করে বিস্মৃতি আর দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লাগাতার এই প্রতিরোধ। ঘাসান কানাফানি কথাসাহিত্যসহ বিভিন্ন শিল্প মাধ্যমে সেই কাজটি নিরলসভাবে করে গেছেন। তাঁর তাবৎ প্রচেষ্টা এবং বিশেষত নানা মাত্রিক শিল্প মাধ্যমে অবদানের জন্য তাঁকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সাহিত্যের অবিনশ্বর প্রতীক হিশেবে বিবেচনা করা হয়। আর রাজনৈতিকভাবে প্রতিরোধ তো চলমান রয়েছে সেই ১৮৮৬ সাল থেকে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি ও ঔপনিবেশিক বিষয়ক গবেষক এমিলি বাদারিন এই প্রাচীন তথ্য দিয়ে বলেছেন, ঐ বছর ইসরাইলের তিকভা এলাকার কট্টর ইহুদিবাদীরা এমলাব্বিস ও আল ইয়াহুদিয়া এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করেছিলো এবং ফিলিস্তিনিরা তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলো। তুর্কি অটোমান শাসনামলের ফিলিস্তিনি রাজনীতিক এবং বহু বছর ধরে জেরুজালেমের মেয়রের দায়িত্ব পালন করা নেতা ইউসুফ আল খালিদি তো সেই অতীতকালেই আসন্ন উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। জায়নবাদের রাজনৈতিক জনক থিওডর হার্জেলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে আল খালিদি ঐ সময় বলেছিলেন যে, ফিলিস্তিনি জনগণ ইহুদিদের উপনিবেশ ও জায়নবাদীদের 'প্রভু হওয়ার' আকাঙ্ক্ষার কাছে কখনোই মাথা নত করবে না, বরং অবিচলভাবে তারা প্রতিরোধ করে যাবে। পরে ঠিক তা-ই হয়েছে। বহুবার ইসরাইলের আগ্রাসন হয়েছে এবং প্রতিবারই ফিলিস্তিনিরা আমরণ প্রতিরোধ করে গেছে এবং বর্তমানেও, এই ২০২৩ সাল অব্দি গাজাসহ গোটা ফিলিস্তিনে ইসরাইলের দখলদারিত্ব ও গণহত্যার প্রতিবাদে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে।