'ফররুখ আহমদ গীতি সংগ্রহ' প্রথম খণ্ড প্রকাশের পর পাঠকদের মাঝে অভূতপূর্ব সাড়া দেখে যারপরনাই আনন্দিত হয়েছি। পাঠকদের আগ্রহই দ্বিতীয় খণ্ডের কাজকে তরান্বিত করেছে। কাজ করতে গিয়ে ফররুখ আহমদের অগ্রন্থিত-অপ্রকাশিত রচনার বিশাল ভাণ্ডারের সাথে পরিচয় ঘটেছে। গানের ক্ষেত্রে, একটা বড় অংশ অপ্রকাশিত। দ্বিতীয় খণ্ডে শতভাগ না হলেও অনেকটা প্রকাশিত হচ্ছে। এই কাজ-সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকে যেমন আপুত; আশা করছি পাঠকরাও প্রথম খণ্ডের ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় খণ্ড একইভাবে গ্রহণ করবেন। ফররুখ আহমদ নিজের লেখা নিয়ে বরাবরই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। শেষ বয়সে তিনি পাণ্ডুলিপি সাজানোর উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে ফররুখ গবেষক আবদুল মান্নান সৈয়দ লিখেছেন- "ফররুখ আহমদের প্রকাশিত-অপ্রকাশিত রচনার বিপুল পরিমাণ পাণ্ডুলিপি কবি নিজেই থরে থরে সাজিয়ে রেখে গেছেন। এ থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়- নিজের রচনার প্রতি কবির শ্রদ্ধা ও প্রেম এবং তাঁর আত্মপ্রত্যয়।" "...কবি তাঁর পাণ্ডুলিপি রচনা করতেন রেখা-টানা এক্সারসাইজ খাতায় বা বড়ো ল্যাবরেটরি খাতায়, কখনো-বা ছেঁড়া টুকরো কাগজে; পত্রিকা বা বই এর শাদা পৃষ্ঠায় বা পৃষ্ঠাংশেও লিখতেন অনেক সময়।" "জীবনের শেষ পর্বে ফররুখ আহমদ স্বরচিত পাণ্ডুলিপিগুলো সংস্কৃত, পুনর্লিখিত, পরিমার্জিত, সজ্জিত, বিন্যস্ত করেছিলেন সযত্নে। বেতারে সম্প্রচারিত তাঁর অজস্র গান সংগ্রহ করেছিলেন- গানের পাশে-পাশে সুরকারের নামও লিখে রাখছিলেন। গদ্যরচনার বাসনাও ছিল- কিন্তু লিখতে পারেননি বা সময় পাননি, আত্মপ্রত্যয়ী ফররুখ নিজের লেখার মূল্য ঠিকই জানতেন।” (ফররুখ আহমদ জীবন ও সাহিত্য, পৃষ্ঠা ৩১২, ৩২০)। ফররুখ আহমদের গানের বর্ণনা ও বিষয় বহু বিচিত্র। তাঁর গানে ফুটে উঠেছে মানবিক আর্তি, প্রেম-ভালবাসা, আনন্দ-বেদনা, দ্বন্দ্ব-বিক্ষোভের পাশাপাশি ইসলামী চেতনার দ্যুতি। গানের বিষয়বস্তুতে রয়েছে ব্যাপকতা ও গভীরতা। গানের আঙ্গিক ও রূপরীতির ক্ষেত্রেও কবি বৈচিত্র নিয়ে এসেছেন। কাব্যগীতি, দেশাত্মবোধক, গজল আঙ্গিকের গান, শিশুতোষ, ব্যঙ্গ-রসাত্মক, জাগরণ ও উদ্দীপনামূলক গান ছাড়াও তিনি লিখেছেন- হামদ, নাত, ইসলামী গান। কবি হিসেবে ফররুখ আহমদ ছিলেন আবেগপ্রবণ, দরদিপ্রাণ ও জাতীয় আশা- আকাঙ্ক্ষার প্রতি আন্তরিক। জাতির ক্রান্তিলগ্নে, আনন্দ ও বিপর্যয়ে তিনি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কবিতা, গান ও অন্যান্য সাহিত্যকর্মের মধ্য দিয়ে। ফররুখ আহমদ গীতি সংগ্রহ দ্বিতীয় খণ্ডে হামদ-নাত, কাব্যগীতি, গান ও গজল, শিশুতোষ গান, জাগরণ ও উদ্দীপনামূলক গান, ইসলামী গানসহ বিষয়ভিত্তিক ৫২৫টি গান সংকলিত হলো। কবির অপ্রকাশিত ২৪০টি গান সংযোজন এ বইয়ের উল্লেখযোগ্য দিক। এই বিপুল সংখ্যক অপ্রকশিত গান এবং পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করেছি কবিপুত্র আহমদ আখতার এবং সৈয়দ মুহম্মদ ওয়াহিদুজ্জামানের সহায়তায়। আমাদের দুর্ভাগ্য, ফররুখ গীতির কাজ চলাকালে আহমদ আখতার ইন্তেকাল করেছেন। বলাবাহুল্য, তিনিই এ বইটির ব্যপারে সবচেয়ে বেশি উৎসাহী ও আগ্রহী ছিলেন। পরবর্তীতে আহমদ আখতারপুত্র সৈয়দ আরিফ আহমদ দরূদ-এর সহায়তায় প্রায়-পরিত্যক্ত অবস্থায় আরো কিছু দুর্লভ গান সংগ্রহ করেছি।
কোনো রকম রাজনৈতিক ও গোষ্ঠীগত অারোপিত পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই, শুধুমাত্র নিরন্তর পরিশ্রমের কারণে স্বার্থান্ধ রাজধানীতে টিকে গেছেন অামিরুল মোমেনীন মানিক ৷ তাঁর কোনো পলিটিক্যাল উইশ নেই ৷ অাছে সোশাল কমিটমেন্ট ৷ মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা-সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচারের অাদর্শকে তিনি সবসময় সামনে রাখেন ৷ মানিক, সাংবাদিকতা-সঙ্গীত-সাহিত্যের মধ্য দিয়ে মূল্যবোধসম্পন্ন ও যুক্তিনির্ভর মানব সমাজের স্বপ্ন দেখেন ৷ গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে তাঁর ইউনিক দিক হচ্ছে-এক সাথে তিনি মেঠো রিপোর্টিং, জীবনবাদী গান, টক-শো সঞ্চালনা, খবরপাঠ ও গদ্য লেখেন ৷ দেশের ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় অামিরুল মোমেনীন মানিককে অাখ্যা দোয়া হয় হয় 'শুদ্ধ উচ্চারণের সংবাদকর্মী' হিসেবে ৷ টিভি সাংবাদিকতায় মানিকের হাতেখড়ি ভারতের এনডিটিভির নির্বাহী প্রযোজক অভিজিৎ দাশুগুপ্তের কাছে ৷ গানের ক্ষেত্রে তিনি ক্ষুদ্র হলেও অালাদা ধারা তৈরী করেছেন ৷ মানিক এর নাম দিয়েছেন-মানুষমুখী গান ৷ অবশ্য প্রচলিত গণমাধ্যম তাঁকে বলে 'ব্যতিক্রমী গানের শিল্পী'৷ অবাক শহরে ও অায় ভোর তাঁর বিপুল অালোচিত এ্যালবাম ৷ ছোটবেলায় কবিতার নামে ছাইপাশ লিখতেন ৷ এখন সচেতনভাবে এটা এড়িয়ে চলেন ৷ সোজাসাপ্টা গদ্য লেখেন ৷ সমাজের অসঙ্গতি চোখে অাঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন ৷ তাঁর লেখা 'বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় স্টুপিড শিক্ষক' ছিলো বইমেলায় তরুণদের মধ্যে দ্বিতীয় সবোর্চ বিক্রিত বই ৷ কিংবদন্তি নচিকেতার সঙ্গে তাঁর ভিডিও গানের কৃতিত্ব এপার বাংলা ওপার বাংলায় প্রথম ৷ ২০১৬ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারীতে টিভি সাংবাদিকতায় মানিকের ১০ বছর পূর্ণ হচ্ছে ৷ এর অাগে স্কুল সময়ের ৫, কলেজ বেলার ২, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫, পেশাগত জীবনের ১০; টোটাল ২২ বছরের লড়াই ৷ অামিরুল মোমেনীন মানিক সাংবাদিকতায় পেয়েছেন সম্মানজনক পুরস্কার 'ইউনেস্কো ক্লাব জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ড '৷ শুধুমাত্র অন্তহীন কর্মতৎপরতার কারণে তাঁর কিছু শত্রুও তৈরী হয়েছে ৷ মানিক এদের নাম দিয়েছেন- বেকুব নপুংসক ৷ তবে শুভাকাঙ্ক্ষীরাই তাঁর কাজের মূল প্রেরণা ৷ পেয়েছেন উদীচী ইতিাস প্রতিযোগিতা পুরস্কার, রিপোর্টার্স ইউনিটি লেখক সম্মাননা, সাঁকো এ্যাওয়ার্ড, মৃত্তিকা পদকসহ বেশ কিছু পুরস্কার ৷ প্রফেশনালিজ ও প্র্যাগমাটিজম, তাঁর সারাজীবনের ধ্যান ৷ ২০১৬ সালে অামিরুল মোমেনীন মানিকের মূল শ্লোগান- বাঁচো এবঙ বাঁচাও ৷