"তিতাস একটি নদীর নাম" বইটির প্রাক্কথন অংশ থেকে নেয়াঃ “সাগরময় ঘােষের সহকারী হিসেবে তখন কাজ করতেন আর একজন। তার নাম শ্রী অদ্বৈত মল্লবর্মণ। ছােট আকারের শশীর, ততােধিক ছােট একটা বাংলা উপন্যাসের এক অমর সৃষ্টি ‘তিতাস একটি নদীর নাম'। এখানে আমরা দেখি, তিতাসের মতাে এর প্রতিবেশীরাও যখন ধ্বংসের দ্বারে উপস্থিত হয়েছে। তখন অদ্বৈত নতুন যুগের প্রতিধ্বনিকে উপস্থাপন করতে ভােলেন নি। ফলে অদ্বৈত’র তিতাস লিখিতভাবে যা ব্যক্ত করেছে- তা এখন সমাজ-সত্যে রূপান্তরিত হয়েছে। আঙ্গিকেও তার সফলতা ঈর্ষণীয়। উপন্যাসটির আঙ্গিক সম্পর্কে শান্তনু কায়সার লিখেছেন— “তিতাস নদীর বর্ণনা দিতে গিয়ে অদ্বৈত মল্লবর্মণ লিখেছেন, সে সত্যের মতাে গােপন হইয়াও বাতাসের মতাে স্পর্শপ্রবণ। মন্তব্যটি উপন্যাসের আঙ্গিক সম্পর্কেও প্রযােজ্য হতে পারে। উপন্যাসের সম্পূর্ণ পরিকল্পনাটিই একটি শৃঙ্খলায় আবদ্ধ। কিন্তু তা সত্যের মতাে গােপন’ বলে শরীরের স্বাস্থ্যকর রক্ত সঞ্চালনের মতােই স্বাভাবিক।... অনন্তর মন যেমন মাছ হয়ে জলের গভীরে ডুব দেয় অদ্বৈত ও তেমনি বক্তব্যকে তাঁর উপন্যাসের অন্তকাটামােরই অংশ করে তােলেন। স্নিগ্ধ বাতাসের মতাে কখনাে কখনাে তা আমাদের বােধের শিকড় ধরেও নাড়া দেয়। কিন্তু কখনােই উপন্যাসের শিল্পকাঠামােকে আঘাত করে না।” অদ্বৈত মল্লবর্মণের প্রাকৃত জীবনের ভাষ্য তৈরিতে সফলতা এবং আঙ্গিকে বিন্যাসে আন্তরিকতা 'তিতাস একটি নদীর নাম' উপন্যাসটিকে চিরায়ত সাহিত্যের মর্যাদা এনে দিয়েছে।
জন্ম ১৯১৪ সালের ১ জানুয়ারি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গােকর্ণ গ্রামে এক মৎস্যজীবী পরিবারে। শৈশবেই মাতৃপিতৃহীন। ১৯৩৩ সালে স্থানীয় অন্নদা। এইচ. ই. স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর অর্থোপার্জনের জন্য কলকাতায়। গমন। পেশাগত জীবনের শুরু ত্রিপুরা পত্রিকায়। এরপর সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন নবশক্তি, মাসিক মােহাম্মদী, নবযুগ, আজাদ, কৃষক পত্রিকা ও সাময়িকীতে।। উপন্যাস তিতাস একটি নদীর নামতার স্মরণীয় সাহিত্যকীর্তি। আরভিং স্টোনের উপন্যাস লাস্ট ফর লাইফ-এর বাংলা । অনুবাদ তার আরও একটি উল্লেখযােগ্য সাহিত্য প্রয়াস। মৃত্যু ১৬ এপ্রিল, ১৯৫১।