পারিবারিক, সামাজিক বা অন্য যে-কোনো পর্যায়ে হোক না -অবহেলা বা অবমূল্যায়ন জীবনকে বিপর্যস্ত করে দেয়। বিশেষ করে তিল তিল কষ্টের সপ্নিল প্রত্যাশায় গড়ে তোলা পরিবারের সদস্য হতে প্রাপ্ত অশ্রদ্ধা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য, অকৃতজ্ঞতা ও অবহেলা চরম নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। জীবন হয়ে যায় অবর্ণনীয় কষ্টের ভয়ানক প্রহর। অসহনীয় মানসিক যন্ত্রণায় অনেকে উন্মাদ হয়ে যায়। এমন দুঃসহ অবস্থায় সামান্য সহানুভূতিও হয়ে যায় অসামান্য। এ সামান্য সহানুভূতিকে বৌদ্ধিক বিবেচনায় গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে কীভাবে অবহেলা আর অবমূল্যায়নকে প্রেরণায় পরিণত করে জীবনকে সৃষ্টির উল্লাস আর ঐশ^র্যের অনুপমতায় ভরা অসীম সমৃদ্ধের হিমালয় করে তোলা যায় তা এই উপন্যাসের পরম্পরা কাহিনির মূল বিষয়। নায়কের নাম আজগর সাহেব। তিনি সরকারের একজন প্রভাবশালী সচিব। কাজকর্ম ও চালচলনে ভদ্রলোক আগাগোড়া গাণিতিক আর পুরোপুরি নিখাদ। মানুষটির জীবন ছিল অফিস-বাসা আর সংসারজীবনকে ঘিরে আবর্তিত একটি সৌম্য অধ্যায়। সংসার ছিল সমুদয় ভালোবাসার অফুরান প্ররণা। কিন্তু কারণে-অকারণে স্ত্রী-সন্তানদের চরম তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য আর কদর্য আচরণের শিকার হয়ে ক্রমান্বয়ে কর্ম আর সংসারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠতে থাকেন। এককালের অতি প্রিয় বাসা নামের ভালোবাসার আলয়টিও হয়ে যায় মৃত্যুযন্ত্রণার চেয়েও ভয়াবহ গহ্বর। সংসারপ্রেমী আজগর সাহেব অফিস ছুটি হওয়া মাত্র বাসায় চলে আসতেন। এখন বাসার কথা মনে পড়লে ভয়ে শরীরমন আঁতকে উঠে। বাসায় ফেরার পরিবর্তে একদণ্ড শান্তির অন্বেষায় পার্কের নির্জন এলাকায় একটি পরিত্যক্ত টুলে গভীর রাত অবধি একাকি সময় কাটাতে শুরু করেন। একদিন অসুস্থ আজগর সাহেব পরিত্যক্ত টুলে ঘুমের মধ্যে বেহুঁশ হয়ে যান। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বইছে ঝড়ো হাওয়া। তাঁর হুঁশ নেই। তিন কিশোর টোকাই পার্কে ঘুরতে এসে পরিত্যক্ত টুলে এক লোককে বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকতে দেখে কাছে এগিয়ে আসে। বুঝতে পারে লোকটি বেহুঁশ। সুযোগ বুঝে তারা পরিধেয় ছাড়া অচেতন আজগর সাহেবের সবকিছু চুরি করে ধরা পড়ার ভয়ে পার্ক থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়।
শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)-এর প্রতিষ্ঠাতা । ড. মােহাম্মদ আমীন ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর। চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার চন্দনাইশ গ্রামে। জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম নুরুল ইসলাম, মাতার নাম সকিনা বেগম। পিতামহ মৌলানা গােলাম শরীফ বড়াে হুজুর নামে খ্যাত। বাড়ির পাশে অবস্থিত। দক্ষিণ গাছবাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ড. মােহাম্মদ আমীনের আনুষ্ঠানিক অধ্যয়নের সূচনা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যান বিভাগে। বিএসসি (অনার্স) ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। | আমেরিকা থেকে অর্জন করেন পিএইচডি ডিগ্রি। বাংলা বানান গবেষণায় তিনি অন্যতম একজন খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব। বাংলা ব্যাকরণ, বাংলা বানান ও বাংলা ভাষা নিয়ে এ পর্যন্ত রচিত তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা। ত্রিশ । উপন্যাস, রম্যরচনা, ছােটোগল্প, প্রবন্ধ, রূপকথা, শিশুতােষ সাহিত্য, সাইন্স ফিকশন, জীবনী, ইতিহাস, আইন, বাংলা বানান, গবেষণা প্রভৃতি তার লেখালেখির ক্ষেত্র। নানা বিষয়ে তাঁর লেখা। গ্রন্থসংখ্যা ১৪০। লেখালেখির স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি। একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। লেখালেখি ছাড়াও তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বাংলা বানান বিষয়ে শিক্ষাদান করে থাকেন। বর্তমানে তিনি ইউনিভার্সিটি অব অটোয়া, অন্টারিও, কানাডায় ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবেও দায়িত্বরত আছেন।