ক. মুসলিম অধিকৃত ভারতে তথা বাঙলায় ইসলাম প্রচারে পীর-দরবেশদের ভূমিকা বাঙলা তথা উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার পিছনে এদেশে তুর্কি-আফগান- মোঘল প্রভৃতি মুসলিম রাজশক্তির প্রতিষ্ঠা যে একটি প্রধান কারণ ছিল, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। মুসলিম রাজশক্তির প্রতিষ্ঠা না হলে, এদেশে ইসলাম প্রচার এত ব্যাপকভাবে হতো কিনা, তা নিশ্চয় করে বলা যায় না। কিন্তু তাই বলে মুসলিম রাজশক্তি ইসলাম প্রচারের ব্যাপারে সরাসরি বিশেষ কোনো সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল বলেও কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না। মুসলিম রাজশক্তি প্রতিষ্ঠার আনুষঙ্গিক ফল হিসাবেই এদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার সাফল্যকে ধরা যেতে পারে, এর বেশি কিছু নয়। সিন্ধুবিজয়ী প্রথম মুসলিম মোহাম্মদ বিন কাসিম থেকে আরম্ভ করে বাঙলার শেষ স্বাধীন মুসলিম নৃপতি নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা পর্যন্ত মুসলিম রাজা-বাদশাহদের সম্বন্ধে সাধারণভাবে বলা যেতে পারে যে, তাঁদের মধ্যে কেউ ইসলাম প্রচারের ব্যাপারে সরাসরি কোনো সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন, এমন কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না। অতি সামান্য ব্যতিক্রম অবশ্য দু'একটি ক্ষেত্রে দেখা যায়। প্রথম বাঙলাবিজয়ী তুর্কি মুসলিম ইখতিয়ার-উদ্-দীন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজীর হস্তে একজন 'মেচ' সামন্ত ইসলামধর্মে দীক্ষিত হয়ে 'আলীমেচ' নামধারণ করেছিলেন বলে সমসাময়িক ইতিহাসে দেখা যায়। ১ রাজা গণেশের পুত্র যদু রাজনৈতিক চাপে ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং জালাল-উদ্-দীন মোহাম্মদ শাহ্ নাম ধারণ করে গৌড়ের অধিপতি হয়েছিলেন (১৪১৭-৩২ খ্রি:)। সংখ্যায় খুব সীমাবদ্ধ হলেও এ ধরনের আরও কিছু দৃষ্টান্ত আছে।