"ভূতের পাঁচ পা" বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে নেওয়া গল্প শুনতে সবাই ভালবাসে। সেই গল্প যদি হয় ভূতের, তা হলে আসর জমবেই জমবে। বড়রাও শােনে, ছােটরাও শােনে। গল্প বলার ভেতর আর্ট আছে। বিশ্বাসযােগ্য করে বলতে পারলে তিনি হয়ে ওঠেন জনপ্রিয়। শিশু-কিশােররা যেমন ভূতকে ভয় পায় তেমনি বড়রাও। কিন্তু ভূতের অস্তিত্ব, তাদের অবস্থান, তারা কোথায় থাকে এবং কি ধরনের কাজকর্ম করে তা চিরকালই মানুষের কাছে রয়ে গেছে রহস্যাবৃত। ভূতের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য মানুষ অনাদিকাল থেকে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। অশরীরি ভূত-পেত্নির প্রতি অনেকেরই বিশ্বাস নেই । বিজ্ঞানও এর কোনাে অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। তারপরও কেন মানুষ ভূত-পেত্নি বিশ্বাস করে ? একাকী গভীর রাতে পথ চলতে মানুষ ভয় পায় কেন? কবরস্থান কিংবা শ্মশাণের পাশ দিয়ে পথ চলতে এতাে ভয় কিসের ? রাতে দালানকোঠার ভেতরে থেকেও কাকে ভয় পায় ? কতজন লােক খুঁজে পাওয়া যাবে একদিন কিংবা একবারের জন্য হলেও ভূতের ভয়ে যাদের বুক কাপেনি? -না, একজনও পাওয়া যাবে না। ভূতের পাঁচ পা বইয়ের গল্পগুলাে পড়লে ছােট ভূত, বড় ভূত, মেছাে ভূত, গেছাে ভূত, তালতলার ভূত, বটতলার ভূত, বাঁশ ঝাড়ের ভূতগুলাে কে কোথায় কিভাবে থাকে তার সবিস্তার খবরাখবর পাওয়া যাবে। এসব ভূত কখনাে বেড়াল, কুকুর, গরু, ছাগল, ঘােড়ার রূপ ধারণ করে ছােটদের সামনে আসে। যারা বেশি সাহসী তাদের কাছে অদ্ভুত বেশ ধারণ করে; যেমন কোনােটার পাঁচ পা, কোনােটার তিন মাথা, কোনােটার হাত পা অনেক লম্বা। ওদের ধরা যায় না, এক লাফে তালগাছের উপরে উঠে যায়। এ গল্পগুলােতে রয়েছে ভয়ংকর ভয়ংকর ভূত কিভাবে মানুষের ক্ষতি করে, কিভাবে মানুষকে পথ ভুলিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়, কিভাবে পানিতে চুবিয়ে আধমরা করে। গ্রাম-গঞ্জ কিংবা শহরে যারা একবার কোনাে না কোনােভাবে ভূতের কবলে পড়েছে তারা দেখেছে ভূতের পাঁচ পা। সিয়াম, রাতুল, রাব্বি, তুষারসহ আরাে অনেকেই ভূতের কবলে পড়ে কি কৌশলে আত্মরক্ষা করতে পেরেছিল তা জানার জন্য ভূতের পাঁচ পা বইটি পড়া জরুরি। ভূতের পাঁচ পা বইটির বিষয়বস্তু চিরায়ত কথামালা হলেও প্রতিটি শিশুর চরিত্র গঠন এবং পড়াশােনার প্রতি মনােযােগী হওয়া, সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থেকে জীবন সংগ্রামে প্রতিষ্ঠা পাবারই পথ দেখানাে হয়েছে।
ফোরকান আহমদ একজন আপ্রত্যয়ী, মননশীল ও রুচিশীল লেখক। মানুষের সুন্দর চরিত্র গঠন, নিজেকে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলা, কি কি কাজ করলে মানুষের চরিত্র উন্নত হয় এবং কিভাবে একজন সৎও পরিশ্রমী মানুষ উন্নতি লাভ করতে পারে, তা তিনি তার প্রতিটি লেখায় সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলেন। ছাত্রাবস্থায়। ১৯৬৫ সালে পটুয়াখালী সরকারি কলেজ ম্যাগাজিনে প্রথম লেখা ছাপা হয়। এরপর বিভিন্ন সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকায় তিনি লিখছেন। মূলত কবিতার মাধ্যমেই তার সাহিত্য জগতে প্রবেশ। ১৯৮১ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ আকাঙ্ক্ষার সাগর প্রকাশিত হয়। কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লেখায় তিনি সিদ্ধহস্ত। মননশীল প্রবন্ধ রচনা ঐ পুস্তক সমালােচনা লিখে ইতিমধ্যে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন কছেন। আমাদের সমাজে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে খ্যাতির শীর্ষে অবস্থান করছেন এক শতধিক লােকের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ কর্তক প্রকাশিত মসিক প্রদ্যোত পত্রিকায় সাক্ষাৎকার লিখে তিনি সুধী সমাজের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তিনি ১৯৭৮ সালে তদানিন্তন নয়াবার্তার বার্তা বিভাগে যােগদান করেন। এরপর অল্প সময়ের জনা বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাজ করুন। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদে যােগদান করেন এবং উন্নয়ন বিতর্ক নামক একটি জার্নালের সহকারী সম্পাদক হিসেবে ত্রিশ বছর যাবত দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি এই জার্নালের নির্বাহী সম্পাদক। বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের একটি মাসিক পত্রিকা প্রত্যেকের (১৯৯৮-২০০২) দশ বছরেরও বেশি সময় সহযােগী সম্মানক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ ঊন্নয়ন পরিষদের প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। অধুনালুপ্ত মসিক নতুন চরিত্র নামক একটি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়া তিনি অন্তত দশটি মর্যাদাবান 'অনিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। ফোরকান আহমদ একজন সৃজনশীল প্রকাশক। তিনি পালক পাবলিশার্সের স্বত্বাধিকারী। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পালক পাবলিশার্স প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১০ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ প্রকাশক হিসেবে। পুরস্কার লাভ করুন। ২০১১ সালে আবহমান সামাজিক সংগঠন তাকে বিশিষ্ট লেখক ও প্রকাশক হিসেবে পুরস্কার প্রদান করে। এ পর্যন্ত ছয় শতাধিক সুন্দর ও রুচিশীল বই এখান থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এখান থেকে যে সব লেখকের বই প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্যে বেশ কয়েকজন বেগম রােকেয়া পদক, বাংলাদেশ শিশুএকডেমী পদক পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক । স্বাধীনতা পদকসহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৭০ সালে দক্ষিণ পানপট্টি যুব কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সমাজকল্যাণমূলক কালের সাথে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি জীবন সদস্য বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার্ক গ্রাজুয়েট, জাতীয় অন্ধল্যাণ সমিতি। সভাপতি- সমীক্ষা লেখক গােষ্ঠী, সভাপতি- দশদিগন্ত আর্থ-সামাজিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- আবহমান সামাজিক সংগঠন, পটুয়াখালী সাংবাদিক ফোরাম, বরিশাল বিভাগ কল্যাণ সংস্থাসহ বহু সামাজিক স্ব সংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান্ত্রে সাথে জড়িত। ফোরকান আহমদ ১৯৫৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার উপজেলার পানপট্টিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আমীর হোসইন মোল্লা এবং মায়ের নাম আংকেজ বানু। মায়ের ব্যক্তিগত লাইব্রেরি থেকে তারাশংকর, মানিক বন্দোপাধ্যায়, শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আকবর হােসেন, বনফুল, নীহার রঞ্জন গুপ্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল। ইসলামের বই পড়ে শৈশব থেকে সাহিত্য চর্চায় উদ্বুদ্ধ হন। তিনি ১৯৭৪ সালে বীরপাশা হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ড. মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ কলেজ থেকে এইচএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সসহ এমএ ডিগ্রী লাভ করেন ১৯৮৪ সালে। ২০১৫ সালে তিনি পবিত্র হজব্রত পান করেছেন।