ফ্ল্যাপে লিখা কথা ভূতকে ভয় পায়না এমন লোকের সংখ্যা একেবারেই কম। আবার নিজের চোখে ভূত দেখেছে এমন একটি লোকও খুঁজে পাওয়া ভার। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ভূত বলতে কোনো কিছুর অস্তিত্ব রয়েছে এমন প্রমাণ পাওয়া যাবে না। ওদের হদিস পূর্বেও ছিল না, এখনও নেই। মানুষ, পশু পাখি, জীব-জন্তু প্রত্যেকেই একটি নির্দিষ্ট স্থানে, প্রত্যেকের সুবিধাজনক জায়গায় বসবাস করে। এরা আহার-বিহার করে, চলাফেরা করে কিংবা স্থির দাঁড়িয়ে থেকে নিজেদের অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়; কিন্তু ঐ ভূতের নিবাস, বাড়ি-ঘর, গোত্র পরিচয় কেউ দিতে পারেনি। ওদের শরীর কালো না সাদ;লাল না সবুজ এরও খবর কেউ জানে না। এতো কিছুর পরও মানুষ বিশ্বাস করে ভূত আছে ; এই আমাদের লোকালয়ের কাছাকাছি। পরিত্যক্ত বাড়ি-ঘর, জন-মানবহীন ভিটেবাটি, কবরস্থানের কাছাকাছি, হিন্দুদের শবদাহের স্থান চিতাখোলায়, খালপাড়ে, বিলের ধারে, গভীর জঙ্গলে, বটগাছের মাথায় এই ভূতেরা বসবাস করে। একাকী কাউকে পেলে পথ ভুলিয়ে ওদের আড্ডাখানায় নিয়ে যায়, ঘাড় মটকিয়ে রক্ত চুষে নেয়, আবার কখনো বা পা দু’খানা উপরে তুলে দিয়ে মাথাটা মাটিয়ে পুঁতে দেয়।
এসব ভূতের কান্ড কতটুকু সত্য, আসলে ঘটে কিনা অথবা কিভাবে ঘটে তা এ বইয়ের প্রত্যেকটি গল্পে সুন্দরভাবে লেখক তুলে ধরেছেন। এখানে কল্পকাহিনীর সাথে ছোটরা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিচয় পাবে। মজার মজার গল্পে ভরা এ বইটি ছোটদের খুব ভাল লাগবে।
ফোরকান আহমদ একজন আপ্রত্যয়ী, মননশীল ও রুচিশীল লেখক। মানুষের সুন্দর চরিত্র গঠন, নিজেকে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলা, কি কি কাজ করলে মানুষের চরিত্র উন্নত হয় এবং কিভাবে একজন সৎও পরিশ্রমী মানুষ উন্নতি লাভ করতে পারে, তা তিনি তার প্রতিটি লেখায় সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলেন। ছাত্রাবস্থায়। ১৯৬৫ সালে পটুয়াখালী সরকারি কলেজ ম্যাগাজিনে প্রথম লেখা ছাপা হয়। এরপর বিভিন্ন সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকায় তিনি লিখছেন। মূলত কবিতার মাধ্যমেই তার সাহিত্য জগতে প্রবেশ। ১৯৮১ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ আকাঙ্ক্ষার সাগর প্রকাশিত হয়। কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লেখায় তিনি সিদ্ধহস্ত। মননশীল প্রবন্ধ রচনা ঐ পুস্তক সমালােচনা লিখে ইতিমধ্যে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন কছেন। আমাদের সমাজে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে খ্যাতির শীর্ষে অবস্থান করছেন এক শতধিক লােকের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ কর্তক প্রকাশিত মসিক প্রদ্যোত পত্রিকায় সাক্ষাৎকার লিখে তিনি সুধী সমাজের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তিনি ১৯৭৮ সালে তদানিন্তন নয়াবার্তার বার্তা বিভাগে যােগদান করেন। এরপর অল্প সময়ের জনা বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাজ করুন। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদে যােগদান করেন এবং উন্নয়ন বিতর্ক নামক একটি জার্নালের সহকারী সম্পাদক হিসেবে ত্রিশ বছর যাবত দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি এই জার্নালের নির্বাহী সম্পাদক। বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের একটি মাসিক পত্রিকা প্রত্যেকের (১৯৯৮-২০০২) দশ বছরেরও বেশি সময় সহযােগী সম্মানক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ ঊন্নয়ন পরিষদের প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। অধুনালুপ্ত মসিক নতুন চরিত্র নামক একটি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়া তিনি অন্তত দশটি মর্যাদাবান 'অনিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। ফোরকান আহমদ একজন সৃজনশীল প্রকাশক। তিনি পালক পাবলিশার্সের স্বত্বাধিকারী। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পালক পাবলিশার্স প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১০ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ প্রকাশক হিসেবে। পুরস্কার লাভ করুন। ২০১১ সালে আবহমান সামাজিক সংগঠন তাকে বিশিষ্ট লেখক ও প্রকাশক হিসেবে পুরস্কার প্রদান করে। এ পর্যন্ত ছয় শতাধিক সুন্দর ও রুচিশীল বই এখান থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এখান থেকে যে সব লেখকের বই প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্যে বেশ কয়েকজন বেগম রােকেয়া পদক, বাংলাদেশ শিশুএকডেমী পদক পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক । স্বাধীনতা পদকসহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৭০ সালে দক্ষিণ পানপট্টি যুব কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সমাজকল্যাণমূলক কালের সাথে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি জীবন সদস্য বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার্ক গ্রাজুয়েট, জাতীয় অন্ধল্যাণ সমিতি। সভাপতি- সমীক্ষা লেখক গােষ্ঠী, সভাপতি- দশদিগন্ত আর্থ-সামাজিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- আবহমান সামাজিক সংগঠন, পটুয়াখালী সাংবাদিক ফোরাম, বরিশাল বিভাগ কল্যাণ সংস্থাসহ বহু সামাজিক স্ব সংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান্ত্রে সাথে জড়িত। ফোরকান আহমদ ১৯৫৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার উপজেলার পানপট্টিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আমীর হোসইন মোল্লা এবং মায়ের নাম আংকেজ বানু। মায়ের ব্যক্তিগত লাইব্রেরি থেকে তারাশংকর, মানিক বন্দোপাধ্যায়, শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আকবর হােসেন, বনফুল, নীহার রঞ্জন গুপ্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল। ইসলামের বই পড়ে শৈশব থেকে সাহিত্য চর্চায় উদ্বুদ্ধ হন। তিনি ১৯৭৪ সালে বীরপাশা হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ড. মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ কলেজ থেকে এইচএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সসহ এমএ ডিগ্রী লাভ করেন ১৯৮৪ সালে। ২০১৫ সালে তিনি পবিত্র হজব্রত পান করেছেন।