রোহান থমথমে মুখে চায়ের টং-এ এসে দাঁড়ায়। তার চোখ মুখ বিরক্তিতে খিঁচে আছে। এত সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তার নেই। আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছে। উঠেছে কথাটা ঠিক নয়। ওর মা টেনে তুলেছে। না উঠে উপায়ও ছিল না। যার সাথে দেখা করতে যাবে সে আজই ঢাকার বাইরে চলে যাবে। তার ট্রেন ছাড়বে দুপুর বারোটায়। অতএব তাকে নির্দিষ্ট টাইমের মধ্যে গিয়ে ধরতে হবে। এরকম বাধ্যবাধকতা ব্যাপারটা রোহানের ভালো লাগে না। নিজ স্বাধীন মতো চলাফেরা করতেই তার ভালো লাগে। বিষয়টা এমন সে কারও বসও নয় আবার কর্মচারীও নয়। নিজেই নিজের বস আবার কর্মচারী। এই সাতসকালে মানুষ লাইন ধরে চা খাচ্ছে। বেঞ্চে বসার মতো জায়গা নেই। চা খেতে খেতে সবাই খোশ গল্প করছে। এক হাতে চায়ের কাপ অন্যহাতে সিগারেট। দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে সামনে ইলেকশন। নেতার পয়সায় হরদম চা সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে! একজন উঠে গেলে রোহান বেঞ্চে বসে। মহল্লার টং দোকান। রোহান সকাল বিকাল এখানে চা সিগারেট খায়। টং দোকানের ছেলেটার নাম বুশ। অনেক দিন ধরে সে এখানে চা বিক্রি করে। বুশের চা বললেই মহল্লার সবাই এক নামে চেনে। ওর আসল নাম আলম। তবে ওই নামে এখন আর কেউ চেনে না। ইরাক-আমেরিকা যুদ্ধের সময় এ দেশের মানুষ যখন সাদ্দামের নামে পাগল তখন সে কী মনে করে বুশের সাপোর্ট করেছিল। তখন থেকে তাকে সবাই বুশ বলে ডাকতে শুরু করেছে। ‘বুশের চা’ নামটা এখন এলাকায় প্রচলিত। পাশের মহল্লা থেকেও অনেকে স্পেশাল এক কাপ বুশের চা খেতে আসে।
প্রখ্যাত লেখক ও সাংবাদিক মোঃ জাকির হোসেনের জন্ম ১৯৬৭ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি। পিরোজপুর জেলার অন্তর্গত ভাণ্ডারিয়া থানার এক ছোট্ট গ্রাম তেলিখালীতে আবদুল এবং সুফিয়া বেগমের ঘরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা খরস্রোতা কচা নদী কতবার যে তেলিখালীর উপর ভাঙনের থাবা বসিয়েছে তার হিসাব নেই। কিন্তু গ্রামের মানুষ কচা নদীর এই ভাঙন ভাঙন খেলার সাথে যুদ্ধ করেই বেঁচে আছে। আর শৈশব থেকেই মানুষের এই জীবনযুদ্ধের সাক্ষী মোঃ জাকির হোসেন। একদিকে গ্রামের সবুজ শ্যামল প্রাকৃতিক রূপ, অন্যদিকে নদী ভাঙনের ভয়াবহতা, দুয়ে মিলে তার মনের মধ্যে আলোড়ন তুলেছিল, যা তার লেখক সত্ত্বাকে জাগিয়ে তোলে। মোঃ জাকির হোসেনের বইগুলোতেও তাই পাওয়া যাবে তার গ্রামীণ জীবনের ছাপ। কিশোর বয়স থেকেই সাংবাদিকতা, লেখালেখি আর ফটোগ্রাফির প্রতি ঝোঁক তৈরি হয় তার, প্রচণ্ডরকম ভ্রমণপ্রিয়ও ছিলেন। ভ্রমণরত অবস্থায় প্রকৃতির সাথে সাথে লেখক মনের সংযোগ ঘটতো, যা তাকে সাহিত্য রচনায় উদ্বুদ্ধ করে। ১৯৯০ সালে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় চাকরি শুরু করবার মাধ্যমে সাংবাদিকতা জীবনের সূচনা করেন তিনি। এরপর থেকেই নিরন্তর লিখে চলেছেন এই লেখক। কিশোর উপযোগী গল্প, সায়েন্স ফিকশন, নাটক, থ্রিলার, অ্যাডভেঞ্চার, আত্মোন্নয়নমূলক গ্রন্থ- এগুলোই মূলত প্রাধান্য পেয়েছে মোঃ জাকির হোসেন এর বই সমূহতে। তবে উপন্যাস লেখাতেও তিনি সিদ্ধহস্ত এবং বেশ কিছু কিশোর উপন্যাসও রয়েছে মোঃ জাকির হোসেন এর বই সমগ্রতে। ‘ইংলিশ বিচিত্র’, ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’, ‘ড্রাকুলা’, ‘এক্সট্রা টিকেট’, ‘গ্রহান্তরি কিশোর’, ‘ভয়ঙ্কর প্রেতাত্মা’, ‘মুক্ত মনের কথা’ ইত্যাদি তার জনপ্রিয় রচনা।