গ্রন্থ পরিচিতি সাজ্জাদ জহীরের রোশনাই ইন্দো-পাক উপমহাদেশে প্রগতি সাহিত্য আন্দোলনের ইতিহাস অখণ্ড ভারতবর্ষের ইতিহাসের মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে। ১৯৩০ ও ১৯৪০-এর দশকের ভারতবর্ষ রাজনৈতিক আন্দোলনে উত্তাল সময় ঠেলে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে চলে। সেই সময়ের অভিঘাত শিল্প-সাহিত্যের গায়ে আছড়ে পড়লে এর বিষয়-আঙ্গিকের পরিবর্তন প্রকট হয়ে উঠতে থাকে। কতিপয় শিল্পী- সাহিত্যিক ভাবালুতার মসৃণ পথ ছেড়ে নেমে পড়েন পথে, নিপীড়িত জনগণের সঙ্গে যোগ দিয়ে হয়ে ওঠেন এক্টিভিস্ট বা কর্মী। এদের কণ্ঠে প্রেম নয়, ধ্বনিত হতে থাকে দ্রোহ, প্রতিবাদের ভাষা। এদের কলম থেকে কালি নয়, ঝরে রক্ত। এদেরই সম্মুখ সারিতে দাঁড়িয়ে যাঁরা নিখিল ভারত প্রগতি সাহিত্য আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন, তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য হলেন সাজ্জাদ জহীর। রোশনাই এই অন্দোলনের পথপরিক্রমার একটি বলিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য বয়ান। রোশনাই ইন্দো-পাক উপমহাদেশে প্রগতি সাহিত্য আন্দোলনের ইতিহাস গ্রন্থটি প্রগতিশীল সাহিত্যের একটি জীবন্ত প্যারাডাইম শুধু নয়, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য অপরিহার্য দৃষ্টান্ত। লেখক পরিচিতি সৈয়দ সাজ্জাদ জহির ৫ নভেম্বর ১৯০৫ তারিখে লক্ষ্ণৌতে জন্মগ্রহণ করেন। কাজাখস্তানের আলমা আতাতে একটি সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সময় ১৯৭৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান । তিনি ছিলেন এলাহাবাদের হাইকোর্টের বিচারক সৈয়দ ওয়াজির হাসানের চতুর্থ পুত্র। তিনি ১৯৩১ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেন। তিনি ১৯৩৫ সালে লন্ডনে নিখিল ভারত প্রগতি লেখক সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রগতি সাগিত্য আন্দোলনের সূচনা করেন। পরে ভারতে তার বিস্তার ঘটান। এই সংঘের তিনি ছিলেন সম্পাদক। তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই) উত্তর প্রদেশ রাজ্য সম্পাদক এবং ১৯৩৬ সালে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হন । তিনি ১৯৩৯ সালে সিপিআই-এর দিল্লি শাখার ইনচার্জ মনোনীত হন এবং দুবার জেলে যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতীয় অংশগ্রহণের বিরোধিতা করার জন্য জেলে যান এবং ১৯৪২ সালে মুক্তি পাওয়ার পর, তিনি বোম্বেতে CPI এর পত্রিকা কওমি জং (জনযুদ্ধ) এবং নয়া জামানা (নতুন যুগ) সম্পাদক হন। তিনি ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন (আইপিটিএ) এবং অল ইন্ডিয়া কিষান সভা সংগঠিত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। দেশভাগের পর , সাজ্জাদ জহির সিবতে হাসান এবং মিয়া ইফতেখার-উদ-দীনের সাথে পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি শুরু করেন এবং পার্টির মহাসচিব নিযুক্ত হন। ১৯৫১ সালে তিনি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের সাথে রাওয়ালপিন্ডি ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার হন । তিনি চার বছর জেলে ছিলেন এবং মুক্তির পর ইন্ডিয়া চলে যান। সেখানে নিখিল ভারত প্রগতিশীল লেখক সংঘকে পুনরুজ্জীবিত করেন। আফ্রো-এশীয় লেখক সমিতির ভারতীয় অধ্যায়ের সম্পাদক হন এবং আওয়ামী দৌর (পিপলস এরা) ও দৈনিক হায়াত সম্পাদনা করেন। জহির ১৯৩২ সালে ছোটগল্পের সংকলন অঙ্গারে প্রকাশ করে ১৯৪৪ সালে লখনউ এবং এলাহাবাদের কারাগার থেকে তার স্ত্রীকে লেখা চিঠির একটি সংগ্রহ নুকুশ-ই-জিন্দান নামে প্রকাশিত হয়েছিল । তিনি রোশনাই ইন্দো-পাক উপমহাদেশে প্রগতি সাহিত্য আন্দোলনের ইতিহাস নামে প্রগতি সাহিত্য আন্দোলনের ইতিহাস রচনা করেন। তাঁর গ্রন্থগুলির তালিকা: আঙ্গারে (১৯৩২); বেমার : লন্ডন কি এক রাত (১৯৪২); উর্দু, হিন্দি, হিন্দুস্তানি (১৯৪৭); নকুশ-ই-জিন্দান (চিঠিপত্র ১৯৫১); জিকর-ই-হাফিজ (১৯৫৬); রোশনাই (): পিঘলা নীলম (১৯৬৪):মেরি সুনো (1967); মাজ্জামেইন-ই-সাজ্জাদ জহির (১৯৭৯); এছাড়া তিনি শেক্সপিয়রের ওথেলো, রবীন্দ্রনাথের গোরা, ভলতেয়ারের কনদিদ এবং খলিল জিবরান এর দ্য প্রফেটের অনুবাদ করেন। অনুবাদক পরিচিতি এলহাম হোসেন এলহাম হোসেন একাধারে গবেষক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও সাহিত্য সমালোচক। বর্তমান সময়ের জিজ্ঞাসু পাঠকদের কাছে সুপরিচিত। ঢাবি থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। এমফিল করেছেন ঔপনিবেশিক সাহিত্যে। তাঁর পিএইচডি গবেষণার বিষয় নাইজেরীয় সাহিত্যিক চিনুয়া আচেবের উপন্যাস। তিনি ঢাকা সিটি কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক। বাংলাদেশ ও ভারতের স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে তাঁর একাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় আফ্রিকী সাহিত্যের সমালোচনামূলক প্রবন্ধ-গ্রন্থ রচনায় তিনি একজন অগ্রগামী লেখক। তুলনামূলক সাহিত্য, সাহিত্যতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব ও ইতিহাস তাঁর অন্যতম আগ্রহের বিষয়। গ্রন্থাবলি: ইংরেজি সাহিত্যের গল্পকথা, নাইজেরিয়ার সমস্যা (অনুবাদ), Angst and Anxieties: Historical and Psychological Parallels in Chinua Achebe’s Trilogy, আফ্রিকা : সাহিত্য ও নন্দনভাবনা, The Colonial Encounter and the Postcolonial Ambivalence, Post Colonial Anxiety and Its Aftermath : A Re-reading, আফ্রিকার ছোটগল্প ও সাহিত্যচিন্তা (অনুবাদ), আফ্রিকার ছোটগল্প (অনুবাদ), আফ্রিকার সাহিতভাবনা, সবকিছু ভেঙেচুরে যায় (চিনুয়া আচেবে রচিত থিংস ফল এপার্ট এর অনুবাদ), মুক্তিসন্ধানী শিল্পী (বেন ওকরি রচিত ফ্রিডম আর্টিস্ট এর অনুবাদ), বিশ^ সাহিত্যের কথা, প্রগতি সাহিত্য এবং রোশনাই ইন্দো-পাক উপমহাদেশে প্রগতি সাহিত্য আন্দোলনের ইতিহাস (সাজ্জাদ জহীরের রোশনাই গ্রন্থের অনুবাদ)।