ভয় ঘটনাটি যখন ঘটে, রাত তখন বারোটা কী সাড়ে বারোটা বাজে। বাবা পুলিশের চাকরি করেন। পোস্টিং তার নরসিংদী। শফিক তার কাছে বেড়াতে গিয়েছিল। এখন সে বাড়ি ফিরছে। নরসিংদী থেকে রওনা দিয়ে সে যখন গাবতলি এসে নামল, তখন সন্ধ্যা প্রায় হয় হয়। ল্যাম্প পোস্টের আলোগুলো জ্বলে উঠেছে। মার্কেটগুলোতেও জ্বলতে আরম্ভ করেছে। রাজবাড়ি জেলার কোনো এক প্রত্যন্ত গ্রামে তার বাড়ি। এখনো প্রায় ঘণ্টা চারেকের পথ। পৌঁছাতে অনেক রাত হবে বোঝা গেল। শফিক বেশ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে গেল। ফিরবে কি ফিরবে না, এমন চিন্তায় অনেকক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে রইল। এই শহরে তার কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই; যার কাছে রাতটুকু থেকে যাবে। হোটেলে থাকলে থাকা যায়, কিন্তু মনটা তাতে সায় দিলো না। তাই যত রাতই হোক, বাড়ি ফিরবে বলেই মনস্থির করল। ভাবল যে করেই হোক, পাচুরিয়া স্টেশন পর্যন্ত যেতে পারলেই হয়। তারপর যা হয় হবে। ভ্যান রিকশা একটা ঠিকই ব্যবস্থা করে নেওয়া যাবে। টাকা বাড়িয়ে দিলে কেউ আর না করবে না। তাই সন্ধ্যা অতিক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথেই সে রওনা হয়ে গেল। সে যখন দৌলতদিয়া ঘাটে গিয়ে নামল, রাত তখন নয়টা কি সাড়ে নয়টা বাজে। বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়ি ফেরার একমাত্র মাধ্যম এখন ট্রেন। তাই যত দেরিই হোক, অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় তার রইল না। সে চোখে মুখে একটু পানি ছিটিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলো। তারপর চায়ের দোকানে বসে চা পান করল। সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগল। কিন্তু সময় যেন যেতে চাইল না। অপেক্ষার সময় যে কতটা কঠিন, এই সেদিনই সে প্রথম টের পেল। শেষ হয়েও যেন হতে চাই না। মনটা যায় যায় করে, অথচ যাওয়া যায় না। যা হোক, দেরি হলেও শেষপর্যন্ত সেটা এলো।