হিরামন তোতার কাহিনি একদিন এক শিকারি শিকারের উদ্দেশ্যে গভীর জঙ্গলে ঘুরতে লাগল, এমন সময় শিকারি একটি গাছে সুন্দর হিরামন তোতা পাখি দেখতে পেল, সঙ্গে সঙ্গে শিকারি কাঁধ থেকে তার ধনুক নামিয়ে হিরামন তোতার দিকে তাক করল, হিরামন তোতা বলল, 'আমাকে মেরো না। আমাকে রাজার কাছে বিক্রি করে দিও, অনেক টাকা পাবে, বড়লোক হয়ে যাবে।' শিকারি তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল, 'তোমাকে নিয়ে রাজা, কত আর দাম দেবে?' তোতা বলল-'তুমি আমার কথা বিশ্বাস করে দেখতে পার। আমার দামের কথা আমি নিজেই রাজাকে বলব, তোমাকে কোনো কথা বলতে হবে না।' শিকারি এক মুহূর্ত চিন্তা করে বলল, 'ঠিক আছে তোমার কথামতোই চলব। দেখি বিশ্বাসের মূল্য কতটা পাই।' শিকারি হিরামন তোতাকে নিয়ে রাজদরবারে উপস্থিত হলো। মহারাজ পাত্রমিত্রসহ রাজদরবারে বসেছিলেন, শিকারির হাতে সুন্দর হিরামন পাখি দেখে মহারাজ সভাসদদের উদ্দেশ্যে বললেন-'ভারী সুন্দর পাখি তো!' -উপস্থিত সকলে মহারাজের কথায় সম্মতি জানালেন। শিকারি মহারাজের সামনে অভিবাদন করে বলল, 'মহারাজ, আমি এই পাখিটা বিক্রি করতে চাই।' মহারাজ খুশি হয়ে বললেন, 'তা কত দিতে হবে বাপু?' শিকারি বলল, 'মহারাজ, পাখির দাম পাখি নিজের মুখেই বলবে। আপনি অনুগ্রহ করে পাখির কাছে জেনে নিন।' মহারাজ শিকারির কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন, মনে মনে ভাবলেন লোকটি নিশ্চয়ই পাগল, রেগে বললেন, 'মস্করা হচ্ছে, পাখি কথা বলতে পারে, এই কে আছ এই উন্মাদকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দাও।' শিকারি হাত জোড় করে বলল, 'অপরাধ ক্ষমা করবেন মহারাজ, অনুগ্রহ করে এই গরিবের কথা বিশ্বাস করে একবার জিজ্ঞাসা করে দেখুন না?' মহারাজ সন্দিগ্ধ কণ্ঠে বললেন, 'ঠিক আছে, হিরামন বল দেখি তোমার বিক্রয় মূল্য কত?' হিরামন তোতা পা তুলে প্রথমে মহারাজকে প্রণাম জানাল তারপর বলল, 'মহারাজ আমার মূল্য এক সহস্র স্বর্ণমুদ্রা।'
Dakshinaranjan Mitra Majumder (১৮৭৭ বাংলা ১২৮৪ বঙ্গাব্দ - ১৯৫৬ বাংলা ১৩৬৩ বঙ্গাব্দ) প্রখ্যাত বাংলা ভাষার রূপকথার রচয়িতা এবং সংগ্রাহক। তার সংগ্রহিত জনপ্রিয় রূপকথার সংকলনটি চারটি খন্ডে প্রকাশিত যথা ঠাকুরমার ঝুলি,ঠাকুরদাদার ঝুলি, ঠানদিদির থলে ,এবং দাদামাশয়ের থলে । দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার বাংলা ১২৮৪ সালের (১৮৭৭ ইং) ২ রা বৈশাখে ঢাকা জেলার সাভার উপজেলায় উলাইল এলাকার কর্ণপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতার নাম কুসুমময়ী ও পিতার নাম রমদারঞ্জন মিত্র মজুমদার। দক্ষিণারঞ্জনের বাবা রমদারঞ্জন ১৯০২ সালে মারা যান। পিতার মৃত্যুর পর তিনি পিসিমা রাজলক্ষ্মীর কাছে টাঙ্গাইল বসবাস শুরু করেছিলেন। তিনি বাংলা ১৩৬৩ সালের (১৯৫৬ ইং) ১৬ই চৈত্র কলিকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।