ভূমিকা আমাকে নিয়ে আমার ছোট ভাইবোনদের কেউ আস্ত একটা বই লিখে ফেলবে কখনো ভাবি না। আমি কোনো অর্থেই তাদের কাছে আদর্শ মানব না এবং অবশ্যই কাছাকাছি কেউও না। সবাই বিচিত্র কারণে আমার ভয়ে অস্থির হয়ে থাকে। উদাহরণ দেই-একবার পল্লবীতে আমার মাকে দেখতে গেছি। আমার ছোট বোনের মেয়ে তিথি (বয়স চার) দরজা দিয়ে উঁকি দিল। আমি হাত ইশারায় তাকে ডাকলাম। সে ঘরে ঢুকল। আমি বললাম, নাম কী? সে বলল,তিথি। এই ঘটনা দেখে আমার ছোট বোন মুগ্ধ। সেই সবাইকে অতি উত্তেজিত গলায় বলে বেড়াতে লাগল, আমার মেয়ে তিথির কী প্রচন্ড যে সাহস কেউ বিশ্বাস করবে না। সে দাদাভাইয়ের ঘরে ঢুকেছে। তার সঙ্গে কথাও বলেছে। মোটেও ভয় পায় নি। মমতাজ শহীদের (শিখু) বইটি কেমন হয়েছে আমি জানি না। এখনো পড়ি নি। তবে আমার মা পড়েছেন এবং বলেছেন-“ভালো লিখেছে”। আমার মার মন রাখা কথা বলার অভ্যাস নেই কাজেই ধরে দিচ্ছি শিখুর বইটা ভালো হয়েছে। তার দাদাভাইকে নিয়ে এ দেশের কিছু মানুষের আগ্রত থাকার কথা। শিখুর বই সে আগ্রত হয়তো কিছুটা মেটাবে। আমার এই বোনটির মধ্যে কিছু মজার ব্যাপার আছে। একবার দেখা গলে নিউমার্কেটের বইয়ের দোকানগুলোতে সে যাচ্ছে এবং টাকা তুলছে। ঘটনা হচ্ছে সে কীভাবে বাটিকের কাছে কাজ করতে হয় তা নিয়ে একটা বই লিখে ছাপিয়েছে। এই বই নিউমার্কেটের প্রতিটি দোকানে দিয়ে রেখেছে। মাস শেষে সে বই বিক্রির টাকা তুলে চটপটি খায়। বছর দশেক আগে একবার সে আমার কাছ থেবেক এক লক্ষ টাকা কী কারণে যেন ধার করল। তিন বছর পর টাকা শোধ করতে এল। আমি বললাম, ভাইবোনদের আমি টাকা ধার দেই না। যা দিয়েছি এমনি দিয়েছি। টাকা নিয়ে বিদেয় হ। সে একদিন শাড়ি কিনে লক্ষ টাকা খরচ করল। তার পরিচিত সব তরুণীরাই শাড়ি পেল। এ রকম চরিত্র আশপাশে থাকা ভাগ্যের ব্যাপার। শিখু তার দাদাভাইকে নিয়ে বই লিভে যে ভালবাসার প্রকাশ দেখিয়েছে পরম করুণাময় যেন বহুগুণে তাকে সেই ভালবাসা ফেরত দেন। এই তার প্রতি আমার শুভ কামনা। দাদাভাই হুমায়ুন আহমেদ