ফ্ল্যাপে লিখা কথা বাংলাদেশের গড়পড়তা মানুষের কাছে আফ্রিকা বরাবরই এক দূরবর্তী অন্ধকার মহাদেশ। সে মহাদেশের মানুষ, প্রকৃতি, বন্যপ্রাণী, সাফারি- এসব কিছুর প্রতি মানুষের অসীম কৌতূহল। পূর্ব আফ্রিকার কেনিয়াতে আছে বিশাল সাভানা। মাসাই মারা নামের শত শত বর্গমাইল বিস্তৃত সেই তৃণভূমিতে সহাবস্থান করে সিংহ, হায়েনা চিতার মতো মাংসাশী আর ইম্পালা, জেব্রার মতো তৃণভোজী নিরীহ পশু। তাদের সাথে বাস করে প্রায়-যাযাবর মাসাই উপজাতি। সেই মাসাই-ভূমিতে সাফারি, সদ্যোজাত ইম্পালার বাচ্চা মুখে হিংস্র হায়েনা, লক্ষ ফ্রেমিঙ্গো পাখির বিচরণক্ষেত্র নাকুর হৃদ ঘিরে বিশাল রিজার্ভ ফরেস্ট, রাতের বেলায় অরণ্যের পশুদের জলপান, অভিজাত মাউন্ট কেনিয়া সাফারি ক্লাবে অবস্থান আর মাসাই পল্লীর অবিস্মরণীয় স্মৃতি নিয়ে লেখা এই স্বল্পদৈর্ঘ্য ভ্রমণকাহিনীতে রয়েছে কেনিয়ার বিস্তারিত ইতিহাস আর বিখ্যাত মাউ মাউ আন্দোলনের অজানা তথ্য।
হালকা বলে যাওয়া লেখকের কেনিয়া ভ্রমণের ধারা বর্ণনা পাঠককে হাত ধরে নিয়ে যাবে মাসাই মারার প্রান্তর থেকে বিষুবরেখার অজানা অচেনা সেই দেশটির আরো কয়েকটি অনন্যসাধারণ দর্শনীয় জায়গায়। ভ্রমণপিপাসু পাঠকের ভ্রমণস্পৃহা জাগাতে কিংবা মেটাতে পারে গ্রন্থটি।
সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করলেও ফারুক মঈনউদ্দীন মূলত গল্পকার। তাঁর ছোটগল্পগুলো ভাষার অনবদ্য কাব্যিকতার জন্য প্রথম থেকেই পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। মানুষের অন্তর্লীণ অনুভ‚তি ও বহিরাচরণ তাঁর নিবিড় পর্যবেক্ষণে প্রমূর্ত হয়ে ওঠে। তাঁর প্রথম লেখা গল্প প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার সাহিত্য সাময়িকীতে, আর প্রথম গল্পগ্রন্থ ১৯৯০ সালে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর অন্যতম গল্পগ্রন্থ আত্মহননের প্ররোচনা। নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে তিনি অনুবাদ, সাহিত্য সমালোচনা, ভ্রমণ এবং অর্থনীতি বিষয়ক লেখালেখিতে নিজেকে ব্যাপৃত করেছেন। মার্কিন লেখক ক্লিনটন বি সিলির কবি জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যিক জীবনী অ্যা পোয়েট অ্যাপার্ট গ্রন্থটির অনুবাদের জন্য তিনি ‘আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার ২০১১’ এবং ভ্রমণগ্রন্থ সুদূরের অদূর দুয়ার-এর জন্য ‘সিটি-আনন্দআলো পুরস্কার ২০১৯’ লাভ করেন। তাঁর এযাবত প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে গল্পগ্রন্থ তিনটি, অনুবাদ চারটি, ভ্রমণ সাতটি, অর্থনীতি-ব্যাংকিং বিষয়ক গ্রন্থ পাঁচটি এবং প্রবন্ধগ্রন্থ একটি।