রিজিয়া রহমানের উপন্যাস : বিষয় ও নির্মিতি আমার পিএইচ.ডি গবেষণা অভিসন্দর্ভের পরিমার্জিত গ্রন্থরূপ। এ অভিসন্দর্ভ রচনার জন্য ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে ডক্টর অব ফিলোসফি উপাধি দানে সম্মানিত করেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক ডক্টর সৌরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস এবং অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ শফিউল আযম (কো-সুপারভাইজার) এর তত্ত্বাবধানে আমি এ অভিসন্দর্র্ভ রচনা করি। গবেষণা প্রাক্কালে গবেষণা অভিসন্দর্ভের শিরোনাম ছিল রিজিয়া রহমান ও তাঁর উপন্যাস। আমার গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক প্রয়াত ডক্টর সৌরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বর্তমান অভিসন্দর্ভের কাঠামো পরিকল্পনা ও আভ্যন্তর বিন্যাস পদ্ধতি সংক্রান্ত যাবতীয় পরামর্শ দিয়ে আমার গবেষণা কর্ম দ্রæত তরান্বিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আমার কো-সুপারভাইজার অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ শফিউল আযম মূল্যবান পরামর্শ এবং গ্রন্থ প্রকাশের উৎসাহ ও তাগাদা দিয়ে আমাকে সহায়তা প্রদান করেন। তাদের দুজনের কাছে আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। গ্রন্থ প্রকাশকালে গ্রন্থের বর্তমান শিরোনাম নির্বাচনে ও নির্ধারণে পরামর্শ দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর মহীবুল আজিজ। এছাড়া কথাসাহিত্য বিষয়ক তার তত্ত্বভিত্তিক আলোচনা, নির্দেশনা ও পরামর্শ আমার অনুপ্রেরণার উৎস ছিল। তার কাছেও আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। রিজিয়া রহমান বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল কথাসাহিত্যিকদের গুরুত্বপূর্ণ একজন। ষাটের দশকে বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে তাঁর প্রবেশ। খুব ছোটবেলায় কবিতা লেখা দিয়ে লেখালেখি শুরু করলেও বাংলা সাহিত্যে কথাসাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। বিশেষ করে বাংলা উপন্যাসে তার একটি সুপরিণত জায়গা রয়েছে। অভিজ্ঞতায় ও বিশ্বাসযোগ্যতায় উজ্জ্বল তার প্রতিটি উপন্যাসে রয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী ও বৈচিত্র্যময় জীবনের প্রকাশ। বিষয় বৈচিত্র্যে তাই তাঁর উপন্যাস অনন্য। সংখ্যার বিচারে তার উপন্যাসের উপস্থিতি অস্বীকার করার মত নয়। উপন্যাসের সংখ্যা ছাড়াও রিজিয়া রহমান পরিশ্রমী, মেধাবী এবং নিবেদিত এক কথাসাহিত্যিক। তিনি নানা উপাদান ও উপকরণে সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা উপন্যাসের ভাণ্ডার। জীবদ্দশায় তিনি যথেষ্ট সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেছেন। তবে শক্তিশালী এই লেখক অনেকটা প্রচারের বাইরে ছিলেন। নির্মোহ স্বভাবের এই মানুষটি নিভৃতচারী থেকে তার জীবন অতিবাহিত করে গেছেন। তার সামগ্রিক লেখার পাঠ, আলোচনা-সমালোচনা, গবেষণামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যা অপ্রতুল। তাঁর উপন্যাস নিয়ে ব্যাপক ও বিস্তৃত আলোচনার প্রয়োজনে একটি স্বতন্ত্র সমালোচনা গ্রন্থ রচনার প্রয়োজন অনুভব করেছি। বাংলা উপন্যাসে তাঁর অবদানের বিশিষ্টতা ও যথার্থতা মূল্যায়ন করা বর্তমান গ্রন্থের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।