ফ্ল্যাপে লিখা কথা বাংলার সামাজিক সাংস্কৃতিক ইতিহাস রচনার ভাণ্ডার খুব সমৃদ্ধ নয়। সমকালীন ইতিহাস গ্রন্থে অনুপস্থিতি এবং প্রত্নতাত্ত্বিক ও অন্যান্য আকর সূত্র অনুসন্ধান এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইতিহাস পুনর্গঠনের প্রচেষ্ঠা সাম্প্রতিক সময়ের প্রয়াস বলা যেতে পারে। এ কারণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস জানা সম্ভব হলেও ধারাবাহিক বিবর্তন ও নানা ক্ষেত্রে শাসক ও বাঙালি মনীষার কৃতিত্ব প্রকাশের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের ঐতিহ্যের ঐতিহাসিক গতিধারা জানার মতো একটি গ্রন্থের অভাব তেমনভাবে পূরণ হয়নি। এই শূণ্যতা পূরণের জন্যই ‘বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ নামে এই গ্রন্থের সূচনা। শুধু ইতিহাস ও সংস্কৃতির শিক্ষার্থীদের একাডেমিক প্রয়োজন মেটানো কথা বিবেচান করা হয়নি-বরঞ্চ সকল শ্রেণীর সাধারণ পাঠকদের কাছে এ দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি সঞ্চয়ন উপস্থাপন করার প্রণোদনা থেকে গ্রন্থটি রচনার প্রয়াস নেয়া হয়েছিল। তাই পাদটীকার ভারে ভারাক্রান্ত -করে একে গবেষণা গ্রন্থের আদল দেয়া হয়নি। অথচ গবেষণালব্ধ তথ্যের আলোকেই বিশ্লেষণ করা হয়েছে সরল সাবলীল ভাষায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রাগৈতিহাসিক যুগের উপস্থিতি একটি সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল।বাংলার মানুষের আদি উৎস নিয়েও কিছুটা ধোঁয়াটে ধারণা রয়েছে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ধারার কোনো কোনো গ্রন্থে। বর্তমান গ্রন্থটির যাত্রা শুরু হয়েছে এখান থেকেই। সর্বশেষ সূত্রের আলোকেই বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলার সমাজ বিবর্তন, স্থাপত্য, ভাস্কর্য,চিত্রকলা ,পোড়ামাটির অলঙ্করণ -এ ধারার সামগ্রিক বিষয়ে পূর্বসূরী বাঙালির গড়া সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সরস উপস্থপনা রয়েছে গ্রন্থটিতে। বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলসমূহের বর্ণনা সহ বিগত একযুগে প্রত্নগবেষণার ফলাফলের কয়েকটি দিক প্রচ্ছন্নভাবে যুক্ত হয়েছে এখানে।এছাড়া বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য বলে বাংলাদেশের আদীবাসী সমাজ ও সংস্কৃতি ,লোকধর্ম,লোকবিশ্বাস প্রভৃতি ধারনা যুক্ত করে পাঠককে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা দেয়ার প্রচেষ্টা রয়েছে ‘বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ গ্রন্থটিতে।
সূচি * সূচনা পর্ব * বাংলার মানুষের উৎস সন্ধান * প্রাগৈতিহাসিক যুগের বাংলা * নানা জাতির মিলন মেলা * বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষা * ভৌগলিক পরিচয়: বাঙালির রাষ্ট্রচিন্তা * ইতিহাসের উপাদান * বাংলাদেশের পুরাতাত্ত্বিক ঐতিহ্য (প্রাচীন যুগ) * নতুন আবিষ্কৃত প্রত্নস্থল উয়ারী-বটেশ্বর * মধ্যযুগের বাংলার প্রত্ন ঐতিহ্য * যুগে যুগে বাঙালির স্বাধীনতার সংগ্রাম * বাঙালির আদি সংস্কৃতি * লোক বিশ্বার ও লোকাচার * বাংলার লোকধর্ম * প্রাচীন বাংলার মৃৎশিল্প * বাংলার ভাস্কর্য ও চিত্রকলা * প্রাচীন বাংলার স্থাপত্য * প্রাচীন বাংলার জনজীবন * প্রাচীন বাংলা্র ধর্মচিন্তা * মুসলিম সমাজ ও শাসন প্রতিষ্ঠার পটভূমি * মুসলিম সামরিক সাফল্যের পটভূমি * মুসলিম আগমনের ধারা * মধ্যযুগ পর্ব: অনুসন্ধান প্রসঙ্গে * বাংলায় মুসলিম অধিকার প্রতিষ্ঠা * সাম্প্রতিক গবেষণায় সোনারগাঁওয়ের গুরুত্ব * স্বল্প আলোচিত প্রত্নস্থল বারবাজার * প্রত্নস্থল বাগেরহাট :সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ
ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় ১৯৬০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। পৈতৃক নিবাস বিক্রমপুরের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার গনাইসার গ্রামে। পিতা মরহুম মোসলেম চোকদার ও মা মরহুমা রেজিয়া বেগম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে যথাক্রমে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে ফারসি ভাষায় সার্টিফিকেট কোর্স সম্পাদন করেন। ১৯৮৫ সালে। ফোর্ড ফাউন্ডেশনের বৃত্তি নিয়ে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি. অর্জন করেন ১৯৯৪ সালে। সত্তর ও আশির দশকে ‘শাহনাজ কালাম’ লেখক নামে ছড়া ও গল্প লিখিয়ে হিসেবে পরিচিত হলেও পেশা জীবনে এসে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠক্রমভিত্তিক গ্রন্থ রচনা এবং শিল্প-সংস্কৃতি ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক গ্ৰন্থ ও প্ৰবন্ধ লেখায় বিশেষ মনোনিবেশ করেন। ড. শাহনাওয়াজের রচিত ও সম্পাদনাকৃত গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এক যুগের বেশি সময়কাল ধরে তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে রাজনীতি ও সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ক কলাম লিখে আসছেন।