শত দুশো বছরের অধিক সময়ের নাট্য আন্দোলনের ইতিহাস বিবৃত করার পক্ষে আমাদের পরিসর খুবই সংক্ষিপ্ত। কেননা এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের দুই শতকের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং জাতীয় জীবনের নানা জটিলতা। এছাড়া রঙ্গালয়ে ইতিহাসেও এই দীর্ঘ পথ-পরিক্রমার বহু নট- নটীর প্রবেশ-প্রস্থান ঘটেছে, বহু দল গড়েছে, বহু রঙ্গালয়ের বাতি জ্বলছে -নিবেছে- হয়তো একদিন নাট্য জগৎ থেকে হারিয়ে যাবে সেই সব ইতিহাস কালের গর্ভে। ইতিহাসের নানা সামাজিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পট পরিবর্তনের প্রভাবে তৈরী হয়েছে নানা আন্দোলন এবং সেই সব আন্দোলনের প্রেরণায় আবির্ভাব হয়েছে নতুন নাট্যকার এবং শিল্পীর। খ্যাতিমান এসব নাট্যশিল্পী এবং নাট্য গোষ্ঠীর সমন্বিত নাট্য আন্দোলন নাটককে দিয়েছে রাজনৈতিক চেতনা, ঐতিহ্যবোধ এবং আধুনিকতা। ‘সমাজ চৈতন্যের ধারা ও বাংলা নাটক’ গ্রন্থটিতে সমসাময়িক জীবনের পটভূমিতে রচিত নাটক ও থিয়েটারে উক্ত চেতনার ধারাগুলো তুলে ধরা চেষ্টা করা হয়েছে। বস্তুত রঙ্গমঞ্চে আমাদের রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ‘নীলদর্পন’ নাটককে কেন্দ্র করে। এই নাটকের অভিনয় দেখতে গিয়ে কখনো শাসক সম্প্রদায় উত্তেজিত হয়েছেন, কখনো বা স্বদেশবাসী। ফলে পড়তে হয়েছে রাজরোষানলে। পরবতী যুগে সমসাময়িক রাজনৈতিক ঘটনাকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপাত্মক প্রহসনের মাধ্যমে চিত্রিত করার প্রয়াস দেখা গেল থিয়েটারে। স্বাদেশিকতার মহান আদর্শ প্রচারের অবলম্বন হলো ইতিহাস।