ইসলামী জীবন যাপনে সম্পদ উপার্জন উদ্দেশ্য নয়; বরং তা উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক। মানব সৃষ্টির লক্ষ্য তো ইবাদত করা। যেখানে মানুষের খেদমত ও ধর্মের খেদমত উদ্দেশ্য, তাই যখন কারো সামনে সম্পদ উপার্জনের লক্ষ্য স্মরণ থাকবে, তখন সে উক্ত উদ্দেশ্য অনুযায়ী উপার্জন করবে এবং উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যশীল উপকরণ গ্রহণ করবে, আর লক্ষ্যে ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী উপকরণ পরিত্যাগ করবে। এর দ্বারা ইসলামী অর্থনীতি এবং পাশ্চাত্য অর্থ পদ্ধতির লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে বড় পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। কেননা পশ্চিমা অর্থ পদ্ধতির লক্ষ্য বস্তু হল শরীর লালন-পালন, শারীরিক শান্তি, শরীরে ফুর্তি অথবা আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধ-বান্ধবদের আরাম আয়েশ ছাড়া অন্য কিছু নয়। অপরপক্ষে ইসলামী অর্থ পদ্ধতিতে সম্পদ উপার্জন ও সঞ্চয় বেঁচে থাকার জন্য এবং বেঁচে থাকা ইবাদতের জন্য। পশ্চিমা অর্থনীতিকে যদি পশুত্বের অর্থনীতি বলা হয় তাহলে ভুল হবে না। কেননা সকল পশুরাও তো নিজের অস্তিত, শরীর লালন শারীরিক প্রশান্তির উদ্দেশ্যে জীবিকার চিন্তা করে। প্রত্যেক প্রাণীর একটি জীবিকা পদ্ধতি রয়েছে, যার দ্বারা তারা নিজ জীবিকা তালাশ করে। কিন্তু তাদের সামনে জীবন পরবর্তী অন্য কোনো লক্ষ্য নেই। এ কারণে পশ্চিমা অর্থনীতিতে যদি কোনো ব্যক্তি যে কোনো উপায়ে সম্পদ অর্জন করে এবং এর দ্বারা নিজ পরিবারের চাহিদা পূরণ করে ও অভাব দূর করে তখন এটাকে তারা সফল জীবন মনে করে এবং এর থেকে কিছু যদি উত্তরাধিকারের জন্য রেখে যায়, তখন তারা তাকে উন্নতমানের জীবনধারণকারী বুঝে থাকে। তারা দেখে না সে সম্পদ বৈধ পদ্ধতিতে অর্জন করেছেন, না অবৈধ পদ্ধতিতে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করেছে না করেনি। অথচ ইসলামী অর্থনীতিতে তার কোনো সুযোগ নেই; কেননা সেখানে সম্পদ অর্জনের উপকরণে শর্তারোপ করা হয়েছে, ব্যয় খাতেও শর্তারোপ করা হয়েছে। ইসলামী অর্থনীতির কানূন আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের আনুগত্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ। প্রত্যেক ব্যক্তির বিশ্বাস রাখতে হবে, রিযিক তাকদীর অনুপাতে পাবে মেহনত অনুপাতে নয়; কেননা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য মহান প্রভু তাকদীরে লিখে রেখেছেন।
মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী ১৯৪৩ সালে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার নলদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সালে গ্রামে প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করে বাবুনগর মাদরাসায় ভর্তি হন। তারপর ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রামের জিরি মাদরাসায় থেকে দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন। ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম মুহাদ্দিস আল্লামা আবদুল ওয়াদুদ (রহ.)-এর নির্দেশনাক্রমে তিনি পাকিস্তানের জামিয়াতুল উলুম আল-ইসলামিয়া আল্লামা মুহাম্মদ ইউসুফ বানুরী টাউন করাচিতে ভর্তি হন এবং তৎকালীন মুহাদ্দিস আল্লামা মুহাম্মদ ইউসুফ বানুরী (রহ.)-এর তত্ত্বাবধানে প্রথম বছর তিনি উ”চতর হাদীসশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং পরের বছর ইফতা বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি আল-ফিকহুল ইসলামী নিয়ে পড়াশোনা করেন। হাদীস ও ইফতা বিভাগের শিক্ষা সমাপ্তির পর জামিয়াতুল উলুম আল-ইসলামিয়া আল্লামা মুহাম্মদ ইউসুফ বানুরী টাউনে মুফতি হিসেবে নিয়োগ পান। পরে তিনি এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান মুফতির পদ লাভ করেন এবং দীর্ঘ তিন দশক দায়িত্ব পালন করেন। এ প্রতিষ্ঠানের ইফতা বিভাগে প্রতি বছর ৯ হাজারের বেশি ফতওয়া জমা হত। সেই হিসেবে এ দীর্ঘ সময় তিনি তিন লাখের বেশি লিখিত ফতওয়া সম্পাদনা করেন, যা ওই প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে অনন্য নজির স্থাপন করে। এছাড়াও করাচির ঐতিহ্যবাহী আহমদ উসমানী জামে মসজিদের খতীব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালে মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী ইসলামি শিক্ষা প্রসারে নিজ দেশে ফিরে আসেন। করাচির বানুরী টাউন থেকে চলে এলেও প্রতিষ্ঠানে অন্য কাউকে প্রধান মুফতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বরং দেশে ফিরেও বিশেষ সম্মাননা হিসেবে মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী করাচির উক্ত মাদরাসায় প্রধান মুফতি পদে ছিলেন। এরপর দারুল উলুম হাটহাজারীর পরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)-এর আহ্বানে ২০০১ সালে দারুল উলুম হাটহাজারীয় প্রধান মুফতি হিসেবে যোগদান করেন। আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)-এর মৃত্যুর পর পরিচালনা পরিষদের প্রধান হন তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলির মধ্যে রয়েছে, জাওয়াহিরুল ফাতওয়া, আপ কা সুওয়াল আওর উন কা জওয়াব: আহাদীস কী রৌশনী মেঁ (উর্দু), ইসলামী মায়িশাত কে বুনয়াদী উসূল (উর্দু), মুরাওয়াজা ইসলামী ব্যাংকারী (উর্দু), ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মানব-অঙ্গের ক্রয়-বিক্রয় (বাংলায় অনূদিত), দিলজাগানো সুরভী মলফুযাতে বোয়ালভী (রহ.) ও করোনাকালীন সমস্যা ও তার শরয়ী বিধান ইত্যাদি। ২৯ মুহাররম ১৪৪৩ মোতাবেক ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ (বুধবার) সকাল সাড়ে ১১ টায় দারুল উলুম হাটহাজারীর পরিচালনা কমিটির পরামর্শ সভায় তাঁকে পরিচালক ঘোষণার অল্পসময়ের মধ্যে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন।