কাজী আবদুল ওদুদের প্রাবন্ধিক-মানস এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ , বিমূর্ত: ধর্মীয় গোঁড়ামি মানবতাকে ধ্বংস করে। , মুক্তচিন্তা মানুষের ধর্মীয় চিন্তাকে সহনীয় ও মানবতাবাদী করে তোলে। মানবতাবাদী অন্বেষণ করা সম্ভব। সামাজিক অধ্যয়নের উপর ভিত্তি করে মুক্ত বুদ্ধি চর্চার মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষ এবং মানব কল্যাণের উত্স। রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ইতিহাস। প্রেম ও প্রজ্ঞা মানব সমাজ ও রাজনীতিতে সংস্কৃতির ভিত্তি স্থাপন করতে পারে। সাহিত্যচিন্তা শালীন ও অশোভন বোধকে অতিক্রম করে জীবনের সচেতনতাকে গভীর করে। এই নিবন্ধটি কাজী আবদুল ওয়াদুদের প্রবন্ধে রৈখিক ইতিবাচক ধারণাটি অন্বেষণ করার একটি প্রচেষ্টা, যারা 'মুসলিম সাহিত্য'-এর নেতৃত্বে বুদ্ধির মুক্তির আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন তাদের একজন। , Samaj (1926). 'মুসলিম সাহিত্য-সমাজ' (১৯২৬) এর মাধ্যমে যাত্রারম্ভ যে বুদ্ধির মুক্তি , আন্দোলনের, তার ভাব-নির্মাতা ছিলেন কাজী আবদুল ওদুদ (১৮৯৪-১৯৭০)। আনুষ্ঠানিক ধর্মানুশীলনে নয় বরং ধর্মের মর্মানুসারী জনাব ওদুদ আদি ইসলামের পুনরুজ্জীবন চাননি। ইতিহাস, বিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব, সমাজদর্শন এবং আধুনিক রাষ্ট্রদর্শন অনুসন্ধান করে তিনি বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তিবাদ ও উদার মানবতাবাদী ধারণায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক মুক্তি প্রত্যাশী ছিলেন। , কাজী আবদুল ওদুদের চিন্তাধারা ধর্মসংস্কারমুক্ত এবং সংস্কার-উত্তীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষে তাঁর অবস্থান। রামমোহনের কর্মনিষ্ঠ ভাবধারা তাঁকে প্রভাবিত করেছিল বলা যায়। কারণ তিনি বুদ্ধি ও যুক্তির তীক্ষ্ণতা দিয়ে জীবনকে বিবেচনা করতেন। আবেগের প্রেরণার চেয়ে তাঁর ভাবধারা ছিল অধিকতর যুক্তিবাদী। আবেগের উষ্ণ প্রেরণা থেকে রামমোহন যেমন সমাজ, ধর্ম ও দেশের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেননি; কাজী আবদুল ওদুদও তেমনি। জনাব ওদুদের দৃষ্টিভঙ্গিও মুসলিম ও হিন্দু উভয় সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক মিলন নির্ভর। রবীন্দ্রনাথ (১৮৬১-১৯৪১), গ্যেটে (১৭৪৯-১৮৩২), কামাল আতাতুর্ক (১৮৮৫-১৯৩৮), রোমা রোলাঁ (১৮৬৮-১৯৪৪), শেখ সাদী (১১৭৫- ১২৯২), হযরত মোহাম্মদ (সঃ) (৫৭০-৬৩২) এবং মহাত্মা গান্ধী প্রমুখ মনীষীর দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা কাজী আবদুল ওদুদের অন্তর্লোক আলোকিত ছিল। তাই তাঁর ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাহিত্যিক ভাবধারার মধ্যে একটি উদার, মানবিক, যৌক্তিক, অসাম্প্রদায়িক এবং বৈশ্বিক বোধ অভিব্যক্ত হয়েছে। , সমাজ-রাজনীতি-ধর্ম সম্পর্কে সাংবাদিক আবুল কালাম শামসুদ্দীন এর মতামতের যৌক্তিক প্রত্যুত্তর সম্বলিত প্রবন্ধ হচ্ছে 'জ্ঞান ও প্রেম'। জনাব ওদুদ খুব নির্মোহ, নৈর্ব্যক্তিক এবং বাস্তবতার সাথে সম্পৃক্ত করে দূরদর্শী প্রাজ্ঞতার অভিসারী হয়ে তাঁর
জন্ম : ২৬ এপ্রিল ১৮৯৪, নদীয়া (বর্তমান কুষ্টিয়া) জেলার জগন্নাথপুরে মামার বাড়িতে। পৈত্রিক নিবাস তৎকালীন ফরিদপুর জেলার পাংশা থানার বাগমারা গ্রাম। পিতা কাজী সৈয়দ হােসেন ওরফে সগীরউদ্দীন। মুসলিম সাহিত্য সমাজ’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’-এর অন্যতম সংগঠক ছিলেন কাজী আবদুল ওদুদ। শিক্ষা : ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১৯ সালে এমএ পাস করেন। কর্মজীবন : ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে বাংলার অধ্যাপক হিসেবে যােগদান। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে টেক্সট বুক বাের্ডের সেক্রেটারি রূপে কলকাতায় যান। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় অবসর গ্রহণ। প্রকাশিত গ্রন্থ : নবপর্যায় (প্রথম খণ্ড-১৩৩৩), (দ্বিতীয় খণ্ড-১৩৩৬), রবীন্দ্রকাব্য পাঠ (১৩৩৪), সমাজ ও সাহিত্য (১৩৪১), হিন্দু-মুসলমানের বিরােধ (১৩৪২), আজকার কথা (১৩৪৮), কবিগুরু গ্যেটে (১ম খণ্ড-১৩৫৩), (২য় খণ্ড-১৩৫৩), নজরুল প্রতিভা (১৩৫৫), Creative Bengal (১৯৫০), শাশ্বত বঙ্গ (১৩৫৮), স্বাধীনতা দিনের উপহার (১৯৫১), কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ (১ম-১৩৬২, দ্বিতীয়-১৩৭৬), বাংলার জাগরণ (১৩৬৩), শরৎচন্দ্র ও তারপর । (১৯৬১), হযরত মােহাম্মদ ও ইসলাম (১৩৭৩)। পুরস্কার : ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে শিশিরকুমার পুরস্কার লাভ। মৃত্যু : ১৯ মে ১৯৭০ সালে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।