রবিউল আওয়াল ১৩৯৬ হিজরী মুতাবেক মার্চ ১৯৭৬ ইং সনের কথা। বিশ্ব ইসলামী সংস্থার প্রথম সিরাত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় করাচীতে। এ সম্মেলনে বিশ্ব ইসলামী সংস্থা, মক্কা মুকাররমার ভূমিকা ছিল বেশ অগ্রণী ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমাপনী লগ্নে এ সম্মেলন বিশ্বের সকল গ্রন্থ রচিয়তাগণকে এ বলে আহ্বান জানান যে, কোন গ্রন্থ রচয়িতা বিশ্বনাবী (হল)'র জীবন চরিত বিষয়ে যে কোন ভাষায় গ্রন্থ রচনা করে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ কিংবা পঞ্চম স্থান অধিকার করলে তাঁকে উল্লেখিত ক্রমানুসারে পঞ্চাশ, চল্লিশ, ত্রিশ, বিশ ও দশহাজার সউদী রিয়াল দ্বারা পুরষ্কৃত করা হবে। এমনিভাবে রাবেতার নিজস্ব মুখপাত্র আখবার আল-আলমে ইসলামি কয়েক সংখ্যায় এ বিজ্ঞপ্তি প্রচারিত হয়। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে, উক্ত বিজ্ঞপ্তির বক্তব্য ও বিষয়বস্তু সময়মতো জানা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিছুদিন পরই যখন আমি আমার কর্মস্থল থেকে বাড়ি মুবারকপুরে যাই, তখন আমার ফুফাতো ভাই ও অত্যন্ত শ্রদ্বেয় শিক্ষক মাওলানা আব্দুর রহমান মুবারকপুরি সাহেব শায়খুল হাদিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ রহমানির পুত্র বিষয়টির প্রতি আমার মনযোগ ও দৃষ্টিগোচরে নিয়ে আসে। শুধু এজন্যেই নয়, আমি যাতে উক্ত প্রতিযোগিতায় সক্রিয় অংশগ্রহন করি সে ব্যাপারেও অনেক উৎসাহ অনুপ্রেরণা দেয় এবং খুব জোরেশোরে আমাকে তাগিদ করতে থাকে।
আল্লামা সফিউর রহমান মুবারকপুরি (১৯৪৩-২০০৬) পুরো নাম সফিউর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ আকবর ইবনে মুহাম্মাদ আলি ইবনে আব্দুল মুমিন মুবারকপুরি আযমি। তিনি একজন স্বনামধন্য ইসলামিক লেখক এবং ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত মুহাদ্দিস। তার লেখা রাসূল সা.-এর জীবনীগ্রন্থ আর-রাহিকুল মাখতুম সারা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বহু ভাষায় অনুদিত একটি বই আধুনিক সিরাতগ্রন্থ। তিনি ১৯৪২ সালের ৪ জুন ভারতের আযমগড় জেলার হোসাইনাবাদের মোবারকপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তিনি স্থানীয় শিক্ষকদের কাছে লেখাপড়া করেন এবং আরবী ভাষা, ব্যকরণ, সাহিত্য, ফিকাহ, উসূলে ফিকাহ, তাফসির, হাদিস ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। ১৯৬১ সালে তিনি শরীয়াহ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন একই সাথে মাদরাসায় শিক্ষকতা এবং লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে মুবারকপুরের দারুত তালিম মাদরাসায় এবং ১৯৭৪ সালে বেনারসের জামিয়া সালাফিয়ায় শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৮ সাল হতে তিনি মদিনাস্থ আন্তজার্তিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাসূল সা. বিষয়ক গবেষণা ইন্সটিটিউটে কর্মরত থাকেন। সর্বশেষ রিয়াদের মাকতাবায়ে দারুস সালামে গবেষণার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া বেনারসের মাসিক মুহাদ্দিস পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেছেন। আরবী ও উর্দু ভাষায় তাঁর রচিত গ্রন্থসংখ্যা ত্রিশোর্ধ্ব। ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বর জুমাবার বেলা দু’টায় এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে এই মহান মনীষী মাওলার সান্নিধ্যে চলে যান।