নিপাতনে সিদ্ধ হলে প্রতিবিম্বে ফুটছে প্রতিমুখ অনিন্দ্য দ্বীপ মানুষ কেন কবিতা পড়বে? সময় বাস্তবতায় উত্থাপিত প্রশ্নের ভেতর থেকে হতাশার যে অবারিত বিরানমাঠÑঅনুবীক্ষণীয় তন্ন তন্ন খোঁজে কোথাও নেই সবুজের আঁচড়... অবসরে মানুষ কোথায় যায়! মানুষ বড়ো স্থুল! কোথাও যায় না। বুদ হয়ে থাকে নিজের ভেতরে। অথবা প্রযুক্তির উৎকর্ষ এতোটাই দানবীয় শক্তিমত্তায় মানুষ স্বনির্ভর; নিজের প্রয়োজনের কাছেই হাজির নাজির করে ফেলে সমুদয় আকাক্সক্ষা। তবুও কেন বাড়ে হৃদয়ের ঢিবঢিব! প্রত্যাশিতÑঅপ্রত্যাশিত কোলাহল শেষে মানুষ কখনও সখনও সময় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়; বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আনুষঙ্গিকতা থেকে, চাইলেও পারে না ফিরতে নিজের কাছেও। নিজের থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখার মহাশূন্যতার ভেতরে মানুষ যে বোধসঙ্গী পায় এই অবসরটুকু হৃদয়কে খোঁজারÑ আত্ম উপলব্ধির... তখনই শব্দমত্তের বেড়াজালে ব্যারিকেড তোলে অসংখ্য অনুচ্চারিত কাক্সক্ষাÑপ্রত্যাশা বা মায়া... আমরা বড্ড আদুরে শব্দে তাকে কবিতা বলে ডাকি... কবিতার এই বোধ কি আমাদেরকে নিশ্চিত কোনো গন্তব্যের দিক নির্দিষ্ট করে? কবিতার এই প্রয়োজনটুকু তাই অবিনশ্বর! সাগরের কবিতা কি এ-ই অবিনশ্বরতা দাবি করে! অথবা ভিন্নভাবে বা রূঢ়ভাবে আঘাত করতে চাইলে প্রশ্ন হতে পারে সাগরের কবিতা কি ঐসকল বৈশিষ্ট্যের ভেতর থেকে নির্বাচিত নাকি আত্ম খেয়ালে? নির্বাচিতর মাপকাঠি কি? সীমাহীন প্রশ্নের ভেতর থেকেও যেমন সিদ্ধান্তে পৌছানো সম্ভব নয় কবিতা কি; তেমনি সম্ভব নয় কবিতার মানদণ্ড নির্বাচন। নির্বাচিত কবিতার প্যারামিটার তাই নির্ধারিত নয়। বরং কবিতার মতোই এ-ই নির্বাচন প্রক্রিয়া আত্মঘাতী! তবে যে বিবেচনায় ‘নির্বাচিত কবিতা’, তার উদ্যোগ ব্যাখ্যাতীত নয়; বরং সুস্পষ্ট। পাঠক বিবেচনায় কবিতাবই যেখানে অলাভজনক একটি পণ্য; সেখানে কোনো কোনো রোমান্টোফোবিয়ায় প্রকাশক কবিতা বই প্রকাশ করে ফেললেও মতিভ্রম ভেঙে যেতে সময় লাগে না। লাভ-ক্ষতির হিসেবে কোনো রকমের পরিচিত-পাঠক- লেখক নানা বিনিময়ে প্রথম মুদ্রণ শেষ হয়ে গেলেও দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হবার কোনো সুযোগ প্রায়শই থাকে না। তবুও কবিতার যে নিবেদিত পাঠক শ্রেণি নিত্য নতুন বইয়ের খোঁজে উৎসাহী- বইয়ের অপ্রতুলতায় সেই আগ্রহও মাঠে মারা যায়। ভিন্ন ভিন্ন বই প্রকাশ করে লেখকের গাঁটের টাকা খোয়ানোর প্রকল্পে লেখক দিশেহারা! এ-ই অবস্থায় নতুন পাঠকের জন্য কম পয়সায় একজন লেখককে সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করার একটি সহজলভ্য বিবেচনা হতে পারে কবিতা সংকলন। কবিতা বিচার নয় বরং পাঠক বিবেচনাই ‘নির্বাচিত কবিতা’ প্রকাশের মানদণ্ড। এবার প্রশ্ন হতেই পারে ‘নির্বাচিত কবিতা’ কি তবে পাঠক প্রধান! বা কবিতার মান কি তবে এই বিবেচনায় উহ্য হয়ে গেলো না! যে কোনো বাহাসে লেখক-পাঠক-সমালোচক নিরন্তর জড়িয়ে যেতে পারি। সময়ের টেবিলে কোনো বাহাসই নিরপেক্ষ নয়; নিজেকে উপস্থাপনই প্রধান লক্ষ্য ও কর্তব্য। একজন কবির জন্য কবিতাই তাই শেষ আশ্রয়... বরং এইসব অনুষঙ্গের পাশ কেটে আমরা মুখোমুখি হই কবিতামগ্ন সময়ের। যখন কবির নাম মুছে দিয়ে কবিতা পঙক্তির সামনে নিজের বোধের প্রতিরূপ দেখে অসহায় আত্মসমর্পণ... অনুচ্চারিত শব্দে অনুভব করিÑ তোমার নিমগ্নতার ছুরি অনবরত কেটে যাচ্ছে চিন্তার পরিচ্ছেদ; আর যত অমাবস্যার যতিচিহ্নে জাপটে ছিল রোদবাহিত তৃষ্ণার ফটোগ্রাফ তাদের মুখছবি লেপ্টে আছে চোখের অপর পৃষ্ঠায়।
সানাউল্লাহ সাগর মূলত কবি। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধিত্বশীল দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য বিভাগ, সাহিত্য পত্রিকাসহ বিভিন্ন বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল থেকে প্রকাশিত লিটলম্যাগে লিখছেন। কবিতা লেখার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাসও লিখছেন নিয়মিত। তিনি ১৯৮৬ সালের ৪ আগস্ট, দক্ষিণ ভূতের দিয়া, বাবুগঞ্জ, বরিশালে জন্মগ্রহন করেন । শিক্ষা জীবনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর সাগর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ‘বাংলাদেশের ব্যঙ্গ সাহিত্য’ বিষয়ে পিএইচডি গবেষণা করছেন।