পড়াশুনায় পিছিয়ে পড়া ছেলে, অমনোযোগী আনমনা। ক্লাসের কেউ তার সঙ্গী ছিল না। সবার পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বসতেন। একমাত্র সঙ্গী ছিলেন তাঁর মা। তার কাছে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের নানান সুর শুনতেন। আর সাথে ছিল বেহালা। এই বেহালা ছিল আইনস্টাইনের সারা জীবন এর সাথি। বাবাকে তেমন কাছে পেতেন না আইনস্টাইন। নিজের কারখানা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন তিনি। আনন্দেই কাটছিল তার জীবন। সেই আনন্দে ভরা দিন গুলোর মাঝে হঠাৎ কালো মেঘ ঘনিয়ে আসলো। সেই শৈশবেই আইনস্টাইন প্রথম অনুভব করলেন জীবনের তিক্ততা। তারা ছিলেন ইহুদি। কিন্তু স্কুলে মেনে চলতে হতো ক্যাথলিক অনুসারীদের নিয়মকানুন। স্কুলের সমস্ত পরিবেশটাই বিস্বাদ হয়ে যায় তার কাছে। দর্শনের বই তাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করত। পনেরো বছর বয়সে তিনি কান্ট, স্পিনোজা, ইউক্লিড, রচনা পড়ে শেষ করে পেলেন। অবসর পেলে বেহালায় বিঠোফেন, মোৎসাটে’র সুর তুলতেন। এগুলোই ছিল তার সঙ্গী সাথি। এইসময় বাবার ব্যবসায় মন্দা দেখা দিল। তিনি স্থির করলেন মিউনিখ ছেড়ে মিলানে চলে যাবেন। তাতে যদি ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। সবাই মিউনিখ ত্যাগ করল, শুধু একা রয়ে গেলেন আইনস্টাইন। সুইজারল্যান্ড এর একটি পলিটেকনিক স্কুলে ভর্তি হলেন। প্রথম পরিক্ষায় পাস করতে না পারলেও পরেরবার ঠিকই পাস করেন। বাড়ির আর্থিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। আইনস্টাইন অনুভব করলেন যে সংসারের দায়িত্বভার তাকেই গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষকতার বৃত্তি গ্রহণ করার জন্য তিনি পদার্থবিদ্যা ও গণিত নিয়ে পড়াশুনা করতে লাগলেন। তিনি তাঁর বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব এবং বিশেষত ভর-শক্তি সমতুল্য তার সূত্র আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত। তিনি ১৯২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। তার পুরস্কার লাভের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে বিশেষ অবদান এবং বিশেষত আলো-তড়িৎ সম্পর্কিত গবেষণার জন্য। আমাদের সভ্য পৃথিবীতে এ-যাবৎ যত বিজ্ঞানী জন্মগ্রহণ করেছেন তার মধ্যে অ্যালবার্ট আইনস্টাইন অন্যতম। আইনস্টাইন মানুষকে খুব ভালোবাসতেন। দরিদ্র, নিপীড়িত ও নির্যাতিতদের প্রতি তিনি ছিলেন সমব্যথী। জীবনের শেষ দিকে তিনি বিশ্বের সকল রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী, ধনী ও সচেতনদের অনুরাধে করেছেন মানুষের কল্যাণে কাজ করতে। তিনি নিজেও তা করে দেখিয়েছেন। তিনি কেবল বিজ্ঞানী নন, একজন মানবতাবাদী লেখকও। তার বিভিন্ন লেখনিতে তা সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। বিশ্বশান্তির জন্য তিনি কাজ করেছেন।