চিঠির আকার বর্তমানে না রাখলেও ডিডাকটিভ লজিকের এই বইখানা একটি স্নেহভাজনকে উদ্দেশ করে বন্দিনিবাসে বসে ১৯৫৯-৬০ সালের দিকে লেখা। চিঠির ভাষার রীতি স্বভাবতই কথা। কিন্তু শুধু সে কারণেই আমি বইখানাতে কথ্য রীতি ব্যবহার করিনি। বাংলা সাহিত্য এবং ভাষার গতি-প্রকৃতি লক্ষ করলে দেখা যায় যে, কথা ও সাধু ভাষার ব্যবধান, যেটি পূর্বে প্রধান ছিল, ক্রমেই লোপ পেয়ে যাচ্ছে। এই ধারা অবশ্যই বাংলা ভাষার অগ্রগতি এবং সার্বজনীন হওয়ারই লক্ষণ। এমন একদিন শীঘ্রই আসবে যেদিন মুখের ভাষা ও বইয়ের ভাষার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য থাকবে না। শুধু ভবিষ্যতের কথা নয়। কথ্য ভাষার রীতিতে যে গুরু-লঘু সমস্ত বিষয়ই প্রকাশ করা চলে এবং সেটিই স্বাভাবিক, তার প্রমাণ বাংলা সাহিত্যের একাধিক পথিকৃৎ রেখে গেছেন। বাংলা ভাষার জাদুকর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তাঁর বহু গুরুত্বপূর্ণ পুস্তক, প্রবন্ধ এবং ভাষণ অনবদ্য কথ্য ভাষায় রচনা করেছেন। সে মান অর্জন করা বড় শক্তির পরিচয়। কিন্তু তাকে অর্জন করার চেষ্টাই আমাদের আদর্শ হওয়া আবশ্যক। ছাত্র-ছাত্রীগণ যেরূপ স্বাভাবিকভাবে তাদের পাঠ্যবিষয় নিয়ে আলোচনা করে এবং অধ্যাপকদের মুখ থেকে শ্রবণ করে, সেরূপ ভাষাতেই তাদের আপন মনোভাব প্রকাশ করা সহজ মনে করেই আমি ভাষার রীতি কথ্য রেখেছি। পরীক্ষাপত্রেও পরীক্ষার্থীগণকে সঙ্গতিপূর্ণভাবে যে কোনো রীতি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয় বলে বর্তমান বইয়ের রীতি অনুসরণ করতে ছাত্র- ছাত্রীদের কোনো অসুবিধা হবে না বলেই আশা করি।
মে ১, ১৯২৫- সালের পহেলা মে বরিশালের আটিপাড়া গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন৷ বাবা খবিরউদ্দিন সরদার কৃষিকাজ করতেন৷ মা সফুরা বেগম ছিলেন গৃহিণী৷ তাঁরা দুই ভাই তিন বোন৷ সরদার ফজলুল করিমের শৈশবকাল কেটেছে গ্রামে৷ ম্যাট্রিকুলেশন শেষে তিনি প্রথম ঢাকা আসেন ১৯৪০ সালে। ঢাকায় ১৯৪২ সনে তিনি তার আই.এ. পাঠ সমাপ্ত করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৪৫ সনে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স ও ১৯৪৬ সনে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে তার সাম্যবাদী বামপন্থী সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকার পর্যায়ে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিগৃহীত হন। রাজবন্দি হিসেবে দীর্ঘ ১১ বৎসর বিভিন্ন পর্যায়ে কারাজীবন যাপন করেন। জেলে থাকা অবস্থাতেই ১৯৫৪ সনে তিনি পাকিস্তান সংবিধান সভার সদস্য হিসেবে কাজ করেন। পরে ১৯৬৩ থেকে '৭১ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পাকিস্তান হানাদারবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হন। পরবর্তিতে তিনি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত শিক্ষক হিসেবে শিক্ষাদান শুরু করেন। তিনি ১৫ জুন, ২০১৪ তারিখে ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়মারা যান৷