আগে পড়ুন সোমনাথ মন্দির। পৌত্তলিকতার স্বর্গরাজ্য। শতাব্দীকাল ধরে এর বেদীমূলে বলি হয়েছে হাজারো নিরীহ নাগরিক, যুগ যুগ ধরে ঝরেছে মানবতার খুন। হিন্দু ব্রাহ্মণদের লালসার শিকার হয়েছে শত শত অবলা নারী। সোমনাথের সেই লৌহকঠিন দুর্ভেদ্য কেল্লায় ইসলামের সুমহান পতাকা পতপত উড়াতে গজনির হিমেল উপত্যকা থেকে ছুটে আসেন কিংবদন্তী মহাপুরুষ সুলতান মাহমুদ। সুলতান মাহমুদ গজনবি। যাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল সমুদ্রের মাঝে ফুঁসে উঠা ঐ উত্তাল তরঙ্গের মতো, যার কাছে এসে পাহাড়সম ছলাৎ ঢেউ মুহূর্তেই চুপসে যেত। তিনি ছিলেন এক দিগি¦জয়ী বীর। যার তরবারি কখনও ঝংকার তুলেছে তুর্কিস্তান, আবার কখনও হিন্দুস্তানের রণাঙ্গনে। যার ঘোড়া কখনও পান করেছে জাইহুন নদীর নির্মল জল, আবার কখনও পান করেছে গঙ্গার সুপেয় পানি। এ জীবন্ত সৈনিকের গতি রুদ্ধ করতে পারেনি পাহাড়-সাগর, অরণ্য-মাঠ, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো। তিনি শোনান শেকল ভাঙার গান। তার হুঙ্কারে থরথর করে কেঁপে ওঠে মন্দিরের পাষাণগাত্র। ঘূর্ণিঝড় শুরু হয় ব্রাহ্মণ-পুরোহিতদের তখতে তাউসে। কাঁপন ধরে সিডর অপেক্ষা তীব্র গতিতে। তার বিজয় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় সিস্তান, মাকরান, তিবরিস্তান, আজারবাইজান ও খারজামের নাম। তাঁকে শক্তি যোগান কারাজীবনের দুঃসহ যাতনাভোগী রণবীর। রণবীরের বাড়িঘর দখল করে নেয় পুরোহিত। বোন শকুন্তলাকে করে ঘরছাড়া। এসব হারানোর বেদনাই তার বাহুতে মহাশক্তির সঞ্চার করে। রূপসাগরের রূপাবতি নামের অপরূপার ঝিলিক পড়ে সোমনাথ মন্দিরে। তার রূপসাগরে অবগাহন করতে চায় পূজারী-পুরোহিত। কিন্তু নিজেকে রক্ষার অদম্য ইচ্ছায় সাহায্যের যোগান দেয় অসিত ওরফে আবদুল ওয়াহিদ, রামনাথ ও সালমান। পিতৃহন্তার প্রতিশোধ নেশায় মত্ত হয় রণবীর। কিন্তু সর্দার জয়কৃষ্ণের গোলাপি কন্যা নির্মলা তার আশ্রয়প্রার্থী। ইউসুফ, ওসমান, সাঈদা, তাহেরা ও জোবায়দা নামে পরিচিতি লাভ করে রণবীর, রামনাথ, নির্মলা, রূপাবতি ও শকুন্তলা। ভয়ানক লড়াইয়ে পঞ্চাশ হাজার লাশের স্তূপ পড়ে যায় সোমনাথ চত্বরে। বিজয়ের সোনার হরিণ পদচুম্বন করে মাহমুদ বাহিনীর। ইতিহাসের এ স্বর্ণোজ্জ্বল আখ্যানইÑ ‘আখেরি লড়াই’।
Nosim Hijajee শরীফ হুসাইন (ছদ্মনাম নসিম হিজাজী হিসাবে বেশি পরিচিতি, জন্ম:১৯১৪ - মৃত্যু: ২ মার্চ ১৯৯৬) হলেন একজন পাকিস্তানি উপন্যাসিক ও লেখক, যিনি লেখালেখির সময় নসিম হিজাজি ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। বাল্য ও কৈশোর কাল গ্রামে কাটলেও তার সোনালী যৌবনটুকু দখল করে আছে ঐতিহাসিক লাহোর শহর। এখানেই তিনি লেখাপড়া করেন এবং লাহোর ইসলামীয়া কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে ডিগ্রী পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি একজন উর্দু ভাষার লেখক। হিজাজী পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার ধারওয়াল শহরের পাশের একটি গ্রাম সুজানপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পূর্বেই ১৯৪৭ সালে তার পরিবার লাহোরে বসবাস শুরু করে। তিনি তার জীবনের অধিকাংশ সময় পাকিস্তানে কাটিয়েছেন এবং ১৯৯৬ সালের ২ মার্চ তারিখে ইন্তেকাল করেন।