"সীমান্ত ঈগল"বইটির প্রথমের কিছু কথা: বিদ্রোহী পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে এল পঞ্চাশজন ঘােড় সওয়ার। ঘন বন পেরিয়ে নদীর ভাংগা পুলের কাছে থামল ওরা। নদীর ওপারে বন আরাে গভীর। উপত্যকায় জংলী গাছের সাথে আংগুরলতা, আপেল, নাশপাতি আর হরেক রকম। ফলের গাছ দেখে বুঝা যায়, কোন কালে এ অরণ্য এক সুদৃশ্য বাগান ছিল। পুলের ওপাশে রাস্তার দুদিকে গাছের ডালপালা ভাঙা সড়কটাকে ছাদের মত ঢেকে রেখেছে। ঘাস আর গুল্মলতা জড়িয়ে রেখেছে সড়কের ভাঙা ইট-পাথর। দেখলেই বুঝা যায, এ সড়কে মানুষের পা খুব কমই পড়ে। নদীটা গভীর নয়। সড়ক ছেড়ে কয়েক পা নিচে নামলে সহজেই নদী পেরােতে পারে সওয়াররা। কিন্তু সামনের দুজন কি ভেবে পুলের কাছে পৌছেই। পেছন ফিরে সওয়ারদের থেমে যেতে ইশারা করল। দলের সকলেই যুদ্ধসাজে সজ্জিত। সামনের দুজন সওয়ারের একজনের গায়ে দুধ-সাদা জামা এবং পাগড়ী। চোখ দুটো ছাড়া গােটা চেহারা নেকাবে ঢাকা। তার সাথী দলের আর সবার মতােই পরেছে বর্ম এবং শিরস্ত্রাণ। কিন্তু তার সুদৃশ্য কালাে ঘােড়া, কারুকার্যময় তলােয়ার, বর্ম আর নজরকাড়া শিরস্ত্রাণ সহজেই সকলের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। তার চেহারায়ও এমন একটা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ব্যক্তিত্বের ছাপ আছে যা সচরাচর দেখা যায়না। বুঝা যায়, এ দুজনই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে। পুলের কাছে এসে থামল দলটি। দাঁড়িয়ে পরস্পর দৃষ্টি বিনিময় করলাে। সাদা পােশাকধারী বলল, আমার ভয় হয়, সে যদি অস্বীকার করে? কালাে ঘােড়ার সওয়ারী জওয়াব দিল, তবে বিদ্রোহীদের সাথে যে ধরনের আচরণ করা হয় তেমনটি করা ছাড়া আমাদের আর কোন গতি থাকবে না। | ‘না, আমাদের দুশমনদের কাছ থেকে সে তার নিজের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। সে যদি শুধু এই সীমান্ত রক্ষার জিম্মাটুকু বহন করে, তবে তার আজাদীর সম্মান আমরা অবশ্যই করবাে।' ‘যদি আমাদের প্রস্তাব নাকচ করে দেয়?
Nosim Hijajee শরীফ হুসাইন (ছদ্মনাম নসিম হিজাজী হিসাবে বেশি পরিচিতি, জন্ম:১৯১৪ - মৃত্যু: ২ মার্চ ১৯৯৬) হলেন একজন পাকিস্তানি উপন্যাসিক ও লেখক, যিনি লেখালেখির সময় নসিম হিজাজি ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। বাল্য ও কৈশোর কাল গ্রামে কাটলেও তার সোনালী যৌবনটুকু দখল করে আছে ঐতিহাসিক লাহোর শহর। এখানেই তিনি লেখাপড়া করেন এবং লাহোর ইসলামীয়া কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে ডিগ্রী পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি একজন উর্দু ভাষার লেখক। হিজাজী পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার ধারওয়াল শহরের পাশের একটি গ্রাম সুজানপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পূর্বেই ১৯৪৭ সালে তার পরিবার লাহোরে বসবাস শুরু করে। তিনি তার জীবনের অধিকাংশ সময় পাকিস্তানে কাটিয়েছেন এবং ১৯৯৬ সালের ২ মার্চ তারিখে ইন্তেকাল করেন।