উপন্যাসটি একটি সমসাময়িক রূপকথা। প্রবহমান কালের প্রেক্ষিতে চারটি শতাব্দি চোখের পলকে বেরিয়ে যায়, সুতরাং সপ্তদশ শতকের প্রথম দশকের প্রেক্ষাপটে লেখা এই রূপকথাটিকে ‘সমসাময়িক’ বলে চিহ্নিত করাই যায়।
মগ আর ফিরিঙ্গি দস্যুদের আক্রমণে ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জনশূন্য হয়ে পড়েছিল। মগেরা রাখান (আরাকান) দেশের লোক, আর ফিরিঙ্গিরা মূলত ওলন্দাজ আর পর্তুগিজ। এদের অত্যাচারে বাদশা আকবরের আমলে সুবে বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল রাজমহলে। মগ-ফিরিঙ্গি দস্যুরা গেরস্থ বাঙালিদের বন্দি বানিয়ে বেচে দিচ্ছে তাম্রলিপ্ত বা বালাসোরের হাটে, এভাবে বাঙালির ঠিকুজি-কুলুজিতে পাকাপাকিভাবে ঢুকে গেল মঘদোষ! একটি আস্ত অঞ্চলের ভৌগোলিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ঘটে গেল চিরদিনের মতো। সুবেদার ইসলাম খাঁ মেঘনার মোহনা থেকে ঢাকা অবধি জলপথে পৌঁছোনোর একাধিক নালা বাঁশ আর মাটি দিয়ে বুজিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবার চেষ্টা করলেন। সপ্তদশ শতকের প্রথম দশকে রাখানদেশের রাজা তখন খামেঙ,আগ্রার মসনদে জাহাঙ্গীর, আর মোহনার মুখে একটুকরো দ্বীপ সন্দ্বীপের স্বাধীন শাসক সেবাস্টিয়ান গঞ্জালভেজ টিবাও। রাজা খামেঙ একটি বিশেষ উপহার পাঠাচ্ছেন মোগল দরবারে। উপহারের সঙ্গে চলেছে নগেন পাড়ুই, রাখানদেশের জঙ্গলে সে একসময় জরিপের কাজ করত, পরবর্তীকালে রোসাঙ্গার চালের কলে খাজাঞ্চির কাজ পেয়েছিল। বাংলার খাঁড়িতে, জালিয়া নাওয়ের পাটাতনে বসে তটের সাদাটে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে রয়েছে ফিরিঙ্গি দস্যু ভিষকু, তার খাস-রাঁধুনি বাঙালির ছেলে শ্যামল। বাংলার এক অখ্যাত পল্লিগ্রামে শ্যামলের ফেরবার আশায় তিথিনক্ষত্র মেলাচ্ছে ওফেলিয়া। অতঃপর এই সমসাময়িক রূপকথার পঁচিশটি অধ্যায় নিজেই এক-একটি চরিত্র, ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে তারা আপাতত দাঁড়িয়ে, অদৃশ্য ঘটনাপরম্পরা তাদের বেঁধে রাখে।