ষাট থেকে আশি, এই তিন দশকে হতাশাগ্রস্থ আমেরিকান তরুণ তরুণীদের আশ্রয়স্থল ছিল তিনটি নিষিদ্ধ শব্দ- ‘সেক্স ড্রাগস অ্যান্ড রক এন রোল’। যখন ভিয়েতনাম যুদ্ধ আর শীতল যুদ্ধে অস্থির টালমাটাল আমেরিকা। সেই সময়ে অভিমানী এক তরুণ ঢাকা থেকে চলে গিয়েছিল আমেরিকার সানফ্রান্সিসকোতে ডাক্তারি পড়তে। এটা সেই সানফ্রান্সিসকো যাকে বলা হত 'কাউন্টার কালচার' বা হিপ্পি আন্দোলনের রাজধানী। সহপাঠীদের সাথে ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী শান্তি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে করতেই সে দেখে ফেলেছিল পুঁজিবাদের গভীর সংকট আর বীভৎস রক্তাক্ত ক্ষতগুলো। দুই আদর্শবাদের ধারক দুই পরাশক্তির লড়াইয়ের ভেতর দিয়ে বের হয়ে আসা অন্ধকার রাজনীতি সেই তরুণকে পরিণত করেছিল এক বিশ্বনাগরিকে। ৬০ মিলিয়ন লম্বা চুলের হিপ্পি যখন আমেরিকার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে, যখন আমেরিকার ঘরে যুদ্ধ, বাইরে যুদ্ধ, ঠিক তখন ছেলেটির জীবনে প্রেম হয়ে আসে মেলিনি নামের প্রখর রাজনীতি সচেতন দেশপ্রেমিক এক আমেরিকান নারী। যাকে রাশিয়ান স্পাই মনে করে হন্যে হয়ে খুঁজছে এফবিআই। এরপর শুরু হল তাদের পলাতক জীবন। মেলিনিকে নিয়ে টেক্সাস থেকে বর্ডার ক্রস করে মেক্সিকো ঢোকার সময় ছেলেটির জীবনে ঘটে এক চরম বিপর্যয়। ৭০বছর বয়সে সেই তরুণ ফিরে আসে তার ফেলে যাওয়া সেই রোমান্টিক ঢাকায়, যাকে সে ভালোবেসে নাম দিয়েছিল- সিটি অফ মিউজিক। পরিচয় হয় এক তরুণীর সাথে, যে তরুণীর মননশীলতা তৈরি হয়েছিল সেই ষাট সত্তর আর আশি দশকের- এলভিস প্রেসলী, বিটলস, বব ডিলান, জিমি হ্যান্ড্রিক্স, জিম মরিসন, লেড জেপলিন, পিঙ্ক ফ্লয়েড, ইউ-টু আর নির্ভানা শুনে শুনে। মেয়েটি অদ্ভুত ভাবে লোকটির ৩০ বছর বয়সের সেই লম্বা চুলের হিপ্পির প্রেমে পরে যায়। সমস্যাটা শুরু হয় তখনই... The fiction based on fact.
কয়েকটি গানের টাইটেল বললেই শিবলীকে চেনা সহজ, যেমন- 'তুমি আমার প্রথম সকাল', 'হাসতে দেখ গাইতে দেখ', 'আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি', 'জেল থেকে বলছি', 'হাজার বর্ষা রাত', 'পলাশীর প্রান্তর', 'বিবাগী' 'কেউ সুখী নয়' 'প্রিয় আকাশী'। বর্তমানের জনপ্রিয় উপন্যাস- আসমান, দখল, দারবিশ, রাখাল, ফ্রন্টলাইন, ও অন্তিমের লেখক তিনি।ইংরেজি অনুবাদে ব্রিটিশ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত তার নভেল The Seize এখন পাওয়া যাচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত নাম করা বুক স্টোরে। পয়লা বৈশাখের এক কাকডাকা ভোরে জন্ম নিয়েই দেখেন- মুক্তিযুদ্ধ। তখন যুদ্ধ না বুঝলেও নব্বই দশকের স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের ভেতর দিয়েই তাঁর বেড়ে ওঠা। ইন্টারমিডিয়েটে পড়াকালেই স্বৈরশাসকের জেল জুলুম আর হুলিয়া মাথায় নিয়ে চলে আসেন নাটোর থেকে ঢাকায় । অভিনয়ের উপর এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্স শেষে গ্রুপথিয়েটার নাট্যচক্রের সঙ্গে মঞ্চনাটকে কাজ করতে করতেই ধীরে ধীরে বিকশিত হতে থাকেন শিল্পের অন্যান্য মাধ্যমে।অভিভাবকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে একদল গানপাগল তরুণ ব্যান্ড সংগীতের মাধ্যমে বাংলা গানের ধারায় যে-পরিবর্তন এনেছে, শিবলী তাদেরই অন্যতম। যুগযন্ত্রণার ক্ষ্যাপামো মজ্জাগত বলেই প্রথা ভাঙার যুদ্ধে শিবলী হয়ে ওঠেন আপাদমস্তক 'রক'। আধুনিক জীবনযন্ত্রণাগ্রস্ত তারুণ্যের ভাষাকে শিবলী উপস্থাপন করেছেন অত্যন্ত সহজসরল 'রক' এর ভাষায়। আর তাঁর সাফল্য এখানেই । তাই অল্প সময়ের মধ্যেই শিবলী পরিণত হয়েছেন এদেশের ব্যান্ড সংগীতজগতের কিংবদন্তি গীতিকবিতে । শিবলীর লেখা জনপ্রিয় গানের সংখ্যা প্রায় চার'শ। 'কমপ্লিট ম্যান' খ্যাত ঝুঁটিবাঁধা সেঞ্চুরি ফেব্রিকসের দুর্দান্ত সেই মডেল শিবলী ছিলেন নব্বই দশকের ফ্যাশন-আইকন। তিনি একজন সফল নাট্যকার। বিটিভির যুগে তাঁর লেখা প্রথম সাড়া জাগানো নাটক 'তোমার চোখে দেখি'(১৯৯৫)। আরও লিখেছেন- রাজকুমারী (১৯৯৭) সহ প্রচুর টিভি নাটক। নিজের লেখা নাটক 'রাজকুমারী'তে মির্জা গালিব চরিত্রে তাঁর অনবদ্য অভিনয় এখনও অনেকের মনে থাকার কথা।শিবলীর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো- ইচ্ছে হলে ছুঁতে পারি তোমার অভিমান (১৯৯৫)। তুমি আমার কষ্টগুলো সবুজ করে দাও না(২০১০)। মাথার উপরে যে শূন্যতা তার নাম আকাশ, বুকের ভেতরে যে শূন্যতা তার নাম দীর্ঘশ্বাস'(২০১৪)। বাংলা একাডেমী প্রকাশ করেছে তাঁর 'বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীত আন্দোলন'(১৯৯৭), নামে ব্যান্ড সংগীতের ওপর লিখিত প্রথম এবং একমাত্র গবেষণাধর্মী প্রবন্ধগ্রন্থ।শিবলী'র কাহিনী সংলাপ চিত্রনাট্যে ও গীতিকবিতায় প্রথম পূর্ণদৈঘ্য চলচ্চিত্র 'পদ্ম পাতার জল'(২০১৫)। নিজের লেখা সুরে কণ্ঠে ও সঙ্গীত পরিচালনায় প্রথম অডিও এ্যালবাম-'নিয়ম ভাঙ্গার নিয়ম' ।শিবলী'র প্রথম এবং বেস্টসেলার উপন্যাস- দারবিশ (২০১৭)। স্বভাবজাত বোহেমিয়ান, ঘুরেছেন এশিয়া ইউরোপ আর আমেরিকা সহ পৃথিবীর পথে প্রান্তরে।। দুই সন্তান- ওমর এবং ওসমানের বাবা তিনি।