বাংলাদেশ কৃষি ও প্রাণসম্পদে প্রাচুর্যপূর্ণ একটি দেশ। আমাদের রয়েছে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, লালন ও বিকাশের দীর্ঘ ঐতিহ্য সমৃদ্ধ জ্ঞানভান্ডার। কৃষি ও কৃষকের সংস্কৃতির মধ্যে চর্চিত হয়ে সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতায় ঋতুচক্র ও প্রকৃতির পারস্পরিক সুষম বিন্যাসের ভেতর দিয়ে একটি উৎকৃষ্ট চাষাবাদব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলতে পেরেছিলাম। মাটি ও অঞ্চলভেদে উপযুক্ত প্রজাতি নির্বাচন, নতুন জাতের উদ্ভাবন ও তাকে সংহত করে খাদ্য ও পুষ্টিগুণনুযায়ী শস্যপঞ্জিকার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করে পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখার যে ভারসাম্যপূর্ণ কৃষিব্যবস্থা আমাদের পূর্বপুরুষদের হাতে সৃষ্টি হয়েছিল তাতে আজ মারাত্মক ছেদ পড়েছে। আধুনিক কৃষির নামে ষাটের দশকে ‘সবুজ বিপ্লব’-এর মারফতে একদিকে রাসায়নিক উপকরণ, কীটনাশক ও কৃৎকৌশলের নির্বিচার প্রচলন মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস, পরিবেশের বিপর্যয়, পানি দূষণ করাসহ সর্বোপরি আমাদের নিজস্ব কৃষিব্যবস্থাপনাকে ধ্বংসের সূচনা করে; অন্যদিকে জিনবিপ্লবের বরাতে উচ্চফলনশীলতার দোহাই দিয়ে বিদেশি কোম্পানির বীজের বাজারে পরিণত করার আয়োজন সম্পন্ন করা হয়। খুব সহজে প্রপাগান্ডার শিকার হয়ে, জনসংখ্যার ভয়ে আমরা নিজেদের বিপুল প্রাণসম্পদ লুণ্ঠন, কৃষিকে গুটিকয়েক বিদেশি কোম্পানির মুনাফা কামানোর নিশানা বানিয়ে দিই। তাদের আধিপত্য ও বীজ ডাকাতির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের এ-বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের কাজ। আবার খাদ্য চাহিদা ও সংকটের অজুহাতে নতুন নতুন কৃৎকৌশলের বাহারি প্রচারণা দিয়ে শুধু মুনাফা ও একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ কায়েমের জন্য এমন কিছু প্রজাতি প্রচলনের চেষ্টা করা হচ্ছে যা বৈজ্ঞানিকভাবে এখনো প্রতিষ্ঠিত নয়। শস্যের মধ্যে নানা প্রাণীর জিনের বৈশিষ্ট্য প্রবেশ করিয়ে তাতে যে গুণাগুণ আরোপ করা হচ্ছে, তা শেষপর্যন্ত কী ফল দেয় ও পরিবেশে এবং মানবেদেহের ওপর কী প্রভাব ফেলে, তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। জিন-মিশ্রণের এই কারিগরিকে অনেক প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানীই প্রাণ ও পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেন। তবু আমাদের দেশে খাদ্যের সংকট ও নানান রোগবালাইয়ের কথা বলে এই ধরনের বিকৃত বীজের প্রচলনে কোম্পানিগুলো পুরো মাত্রায় উঠেপড়ে লেগেছে।
জন্ম চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ থানার হারলা গ্রামে। অর্থনীতিতে পড়াশোনা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। কাজ করেন আর্থসামাজিক গবেষণার নানান ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের অবস্থা জানা এবং পরিবর্তনের জন্য নীতিনির্ধারণী গবেষণা ও লেখালেখিই তাঁর কাজের প্রধান জায়গা। নারী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য-সম্পদ, তাঁত শিল্প, গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক, জনসংখ্যা এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক বিষয়ে নিবিড়ভাবে দীর্ঘ প্রায় তিন দশক কাজ করে চলেছেন। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নামে পরিচালিত কার্যক্রমের মারাত্মক কুফল ও নারী স্বাস্থ্যের ওপর এর ক্ষতির প্রভাব নিয়ে লেখালিখি এবং প্রতিকার আন্দোলনের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে সুপরিচিত। বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত, সম্মিলিত নারী সমাজ-এর সদস্য। এছাড়াও তিনি দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পর্যায়ে দুটি সংগঠন South Asia Network for Resistance against Traffiking in women and children ও South Aisa Network on Food Ecology and Culture (SANFE)-এর সদস্য এবং নারী স্বাস্থ্যের ওপর প্রজনন প্রযুক্তির ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে সোচ্চার সংগঠন FINRRAGE (Feminist International Network for Research Against Reproductive and Genetic Engineering)-এর সঙ্গে শুরু থেকেই সংশ্লিষ্ট। বর্তমানে উবিনীগ-এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে আছে : নারী ও গাছ : কৈজুরী গ্রামের নারী ও গাছের কথা; ‘জনসংখ্যা প্রসঙ্গ : কৈজুরী গ্রামের নারী ও গাছের কথা; ‘জনসংখ্যা প্রসঙ্গ’; Violence of Population Control; Resisting Norplant : Women's Struggle in Bangladesh Against Coercion and Violence; Depopulation Bangladesh : Essays on the Politics of Fertility and Reproductive Rights; Seeds of Movement: On women's Issues in Bangladesh.