গোমতীর উপাখ্যান-এর কাহিনি গড়ে উঠেছে দুটি শ্রেণিকে কেন্দ্র করে। একদিকে রাজপরিবার, অন্যদিকে প্রজাপরিবার। উভয়ই সমান্তরালভাবে উপস্থাপিত। প্রকাশিত হয়েছে নিকৃষ্ট রাজপ্রাসাদ-ষড়যন্ত্র ও প্রজাপারিবারকেন্দ্রিক ষড়যন্ত্র। ষড়যন্ত্রের বিষাক্ত পরিবেশের পরিণামে যেমন রাজপরিবারের সদস্যরা নিমজ্জিত, তেমনই সাধারণ মানুষের এক রকম অস্তিত্ব-সংকটও প্রকাশিত। অন্ধকার ও ধূসরতা কোনো কোনো চরিত্রের জীবনসমগ্রের প্রতিভাস সৃষ্টি করেছে। এটি যেন ব্যক্তিমানুষের মনোদৈহিক জটিলতার বিন্যাস। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জীবনের বিচ্ছিন্নতা, নিঃসঙ্গতা, একাকিত্ব, আত্মদহন ও ক্রমবর্ধমান ব্যর্থতার সর্বগ্রাসী আকর্ষণে কেউ কেউ হয়ে পড়েছে শূন্য, রিক্ত ও যন্ত্রণাদগ্ধ। গোমতীর উপাখ্যান মনোসংকট ও মনোবিশ্লেষণের নৈপুণ্যে আঙ্গিকগত অভিনবত্ব অর্জন করেছে। ঔপন্যাসিকের আগ্রহ ঘটনা অপেক্ষা মানুষের অস্তিত্বলোকে এবং বহির্জাগতিক ক্রিয়ার পরিবর্তে ব্যক্তিসত্তার বহুমাত্রিক সংকটের ওপর। সৃজনশীল সাহিত্যের শিল্পমাধ্যমে ঔপন্যাসিক দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ঘটনাপুঞ্জ ও চরিত্র-অবয়বকে তিনি রূপায়িত করেছেন ক্যামেরার লেন্স দিয়ে। বর্ণনাভঙ্গির অন্তরালে চিত্রনির্মাণ ও নাট্যরীতির অন্তর্বয়ন এক নতুন শিল্পমাত্রা সৃষ্টি করেছে। সর্বজ্ঞ দৃষ্টিকোণে সুনিয়ন্ত্রিত শিল্পরীতির সুগঠিত নাটক, স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত।