স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে প্রেজেন্টেশন দিতে গিয়ে শ্রোতাদের ড্যাবড্যাবে চোখের দিকে তাকিয়ে কাঁচুমাচু খাওয়ার অভিজ্ঞতা নেহাত কম নয় আমাদের মাঝে। এমনকি বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যকার ব্যবসায়িক চুক্তির একটা বড়সড় শর্তই হলো মৌখিক ও ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস ও চুক্তির ফায়দাগুলো তুলে ধরা অপরের সামনে। আর মাঠে ঘাম ঝরানো সেলসম্যানদের তো দিনটাই কেটে যায় কথার ফুলঝুরিতে খরিদ্দারের মন জয় করতে গিয়ে। কিন্তু কীভাবে সম্ভব স্বল্প সময়ের সাক্ষাতে ভার্সিটির ফ্যাকাল্টি, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বড় কর্মকর্তা কিংবা খুচরো ক্রেতার মন জয় করা? এই প্রশ্নের উত্তরই রসালো ভঙ্গিমায় অবতারণা করেছেন ব্রায়ান ট্রেসি তার ম্পিক টু উইন বইতে। পরীক্ষিত উপায়ে তিনি বর্ণনা করেছেন প্রস্তুতির সাথে কীভাবে একজন দক্ষ প্রেজেন্টার কিংবা বক্তা হওয়া যায়। খটমটে ভাষা পরিহার করে সাবলীল লেখনীতে পাঠক খুঁজে পাবেন আত্মবিশ্বাসের সাথে সঠিক উপায়ে প্রস্তুতি নিয়ে স্বল্প-মাঝারি- বিশাল জনসমাগমের সামনে নিজের কথা তুলে ধরার কৌশল। পাঠক, ছাত্র কিংবা কর্মজীবনে মুখচোরা হয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত, হতাশ হয়ে পড়লে হাতে তুলে নিন বইটি। ব্রায়ান ট্রেসির বর্ণিত পদ্ধতিগুলো কাজে লাগান, ফলাফল নিজেই দেখে নেবেন।
ব্রায়ান ট্রেসি একজন কানাডিয়ান-আমেরিকান বক্তা এবং আত্মোন্নয়নমূলক রচনা লেখক। তিনি 'ব্রায়ান ট্রেসি ইন্টারন্যাশনাল' নামক সংস্থার চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী। এই সংস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ ও বিকাশে সহযোগিতা এবং সার্বিক উন্নয়নে কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা। ব্রায়ান ট্রেসি নেতৃত্ব, ব্যক্তিত্ব, আত্মসম্মান, লক্ষ্য, কৌশল, সৃজনশীলতা এবং সাফল্য- মনোবিজ্ঞানের এই শাখাগুলোর তাৎপর্য অনুধাবনের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করার কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জনপ্রিয় এই বক্তার জন্ম কানাডার প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডে, তারিখটা ১৯৪৪ সালের ৫ জানুয়ারি। পড়াশোনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টা থেকে। ১৯৮৪ সালে কানাডার ভ্যানকুভারে তিনি 'ব্রায়ান ট্রেসি ইন্টারন্যাশনাল' প্রতিষ্ঠা করেন। তার ৪০ বছরের বেশি কর্মজীবনে তিনি প্রায় ১,০০০ এরও বেশি প্রতিষ্ঠানকে কাউন্সেলিং সেবা দিয়েছেন, এবং প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ মানুষের সামনে বক্তব্য রেখেছেন। কানাডা, আমেরিকার বাইরেও প্রায় ৭০টি দেশে তার প্রচারিত আলোচনা অনুষ্ঠানের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। ব্রায়ান ট্রেসি এর বই এবং তার আলোচনার ভিডিও ও অডিও ক্লিপ সারা বিশ্বের কর্পোরেট ও ব্যক্তিপর্যায়ের উদ্যোক্তা তরুণদের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তিনি বিশ্বব্যাপী প্রচারিত ও বিক্রিত ' সাইকোলজি অব এচিভমেন্ট'সহ প্রায় ৫০০টিরও বেশি অডিও ও ভিডিও প্রোগ্রাম তৈরি ও প্রযোজনা করেছেন, যা ২৮টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ব্রায়ান ট্রেসি এর বই সমগ্র হলো 'দ্য ২১ সাকসেস সিক্রেটস অব সেল্ফ মেইড মিলিওনিয়ারস', 'টাইম ম্যানেজমেন্ট', 'ইট দ্যাট ফ্রগ!', 'চেঞ্জ ইয়োর থিংকিং চেঞ্জ ইয়োর লাইফ', 'লিডারশিপ', 'কিস দ্যাট ফ্রগ', 'নো এক্সকিউজ : দ্য পাওয়ার অব সেল্ফ ডিসিপ্লিন' ইত্যাদি। ট্রেসির লেখা বইগুলো তার অনুপ্রেরণা জোগানো বক্তব্যগুলোর মতই আকর্ষণীয় ও শিক্ষণীয়। কর্পোরেট ম্যানেজমেন্টের জগতে আত্মোন্নয়নমূলক পন্থা বাতলে তরুণদের কাছে ব্রায়ান ট্রেসি এর বই সমূহ বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।