"বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস -২য় খণ্ড" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: গত অর্ধশতাব্দী কাল ধরে সুকুমার সেন ও 'বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস প্রায় সমার্থক এবং সমােচ্চারিত। বস্তুত, এই মহাগ্রন্থের নতুন করে পরিচিতির প্রয়ােজন পড়ে না, এমনই পরিচিত এবং এমনই প্রয়ােজনীয় এই বই। সুকুমার সেনের বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪০ সালে। মুদ্রণকালেই এ-গ্রন্থের বিষয় ও রচনাভঙ্গির বৈশিষ্ট্য মুগ্ধ করেছিল স্বয়ং রবীন্দ্রনাথকে। মংপু থেকে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কে একটি চিঠিতে তিনি লিখছেন : “বাংলা সাহিত্যের সমগ্র পরিচয়ের এমন পরিপূর্ণ চিত্র ইতিপূর্বে আমি পড়িনি। গ্রন্থকার তাঁর বিবৃতির সঙ্গে সঙ্গে আলােচিত পুস্তকগুলি থেকে যে দীর্ঘ অংশসকল উদ্ধৃত করে দিয়েছেন তাতে করে তাঁর গ্রন্থ একসঙ্গে ইতিহাসে এবং সঙ্কলনে সম্পূর্ণ রূপ ধরেছে।” সন্দেহ নেই, সুকুমার সেনের এই গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। ইতিহাসকে যথাসম্ভব কালানুক্রমিক ও একই সঙ্গে বস্তুনিষ্ঠ রূপে বর্ণনা করাই যে সার্থক ইতিহাস-রচয়িতার লক্ষ্য হওয়া উচিত, সেদিকে প্রথম আমাদের দৃষ্টি ফেরালেন তিনি। আরেকটি উল্লেখ্য ব্যাপার হল, কখনওই আত্মতুষ্ট থাকেননি তিনি। এ-গ্রন্থের প্রতিটি নতুন মুদ্রণকে করে তুলেছেন প্রকৃত অর্থে একেকটি সংস্করণ। নতুন আবিষ্কৃত তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্ত করেছেন নতুনতর তথ্য, ভুলভ্রান্তি নজরে এলেই লিপ্ত হয়েছেন সংশােধনে, নিজের পূর্ববর্তী ধারণা বা মতের পরিবর্তন ঘটলে, এ-গ্রন্থেও প্রতিফলিত করেছেন সেই বদল। যেমন, এই নতুন আনন্দ-সংস্করণে। পরিবর্জনে-পরিবর্তনে-পরিবর্ধনে বলা যায় একেবারে নতুন এক বই । নতুনভাবে বিভক্ত হয়েছেখণ্ড, বহু পরিচ্ছেদের বিষয়বস্তুর পর্যন্ত ঘটানাে হয়েছে বদল। এই দ্বিতীয় খণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সপ্তদশ শতাব্দীর শুরু থেকে অষ্টাদশ। শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের ধারাবাহিক ইতিহাস। এই শতাব্দীর সমানবয়সী সুকুমার সেন। তাঁর সতর্ক ও সন্ধানী মন এখনও যে কত জঙ্গম, তারই অনুপম উদাহরণ হয়ে রইল ‘বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস’-এর এই আনন্দ-সংস্করণ।
Sukumar Sen-এর জন্ম : জানুয়ারি ১৯০০ সাল। কলকাতায়। বর্ধমান মিউনিসিপাল হাই ইংলিশ স্কুল থেকে ১৯১৭ সালে পাশ করেছেন প্রবেশিকা পরীক্ষা, মোহিনীমোহন মিশ্র মেডেল পেয়ে। আই-এ, বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে। সংস্কৃত, বাংলা ও গণিত তিন বিষয়ে লেটার। সংস্কৃত কলেজ থেকে সংস্কৃত অনার্সে বি-এ। কমপ্যারেটিভ ফিললজিতে এম-এ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সোনার মেডেল। ১৯২৪-এ প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি। ১৯২৬-এ মোয়াট মেডেল। ১৯২৬-৩১ মৌলিক গবেষণা করে তিনবার গ্রিফিথ মেমোরিয়াল পুরস্কার ও দু-বার স্যার আশুতোষ মুখুজ্জে মেডেল পেয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার ১৯৩০ সাল থেকে, এর আগে অনারারি লেকচারার। ১৯৩৭-এ পি-এইচ-ডি.| ১৯৫৪-১৯৬৪ খয়রা অধ্যাপক। ১৯৫২তে ভাষাতত্ত্ব বিভাগের অধ্যক্ষ। ১৯৬৩তে রবীন্দ্র পুরস্কার। ১৯৮১-তে বিদ্যাসাগর পুরস্কার। এ-ছাড়াও আনন্দ পুরস্কার, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এর রামেন্দ্রসুন্দর স্মৃতি পুরস্কার। সরোজিনী মেডেল। এমন আরও বহু। বিশ্বভারতী দিয়েছেন ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়—ডি. লিট| নানা গ্রন্থ : ইংরেজীতে ও বাংলায়।