তিনি ছিলেন যেমন বিতর্কিত, তার চেয়েও বেশি মজলুম। শেকড় সন্ধানী লেখক হওয়ায় বাতিলের কোনো দূর্গকে ছেড়ে দেননি। এক এক করে ভেঙে দিয়েছেন কুচক্রী ও অপব্যাখ্যাকারীদের কল্পিত প্রাসাদ। মুসলিমদের আকিদা-বিশ্বাস ও মনোজগতে নানামুখী বিভ্রান্তির সেই ক্রান্তিকালে সংস্কারের ঝড় বইয়ে দেন ইমাম ইবনে তাইমিয়া। এরিস্টটলের নাস্তিক্যবাদি দর্শনে যখন ইলমে কালাম হারাতে বসেছিল নিজের স্বকীয়তা, তখন তাঁর কলম আগলে ধরেছিল কালাম শাস্ত্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্যকে। শিআ ও খ্রিষ্টবাদের বিকৃতি চুরমার করেছেন শব্দবোমার আঘাতে। তৎকালীন মুসলিম সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার ও ভ্রান্ত মতবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত। ইবনে তাইমিয়া ছিলেন জনগণের ইমাম। বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ও সত্যের পক্ষে বুলন্দ আওয়াজে প্রবাদপুরুষ। সপ্তম শতাব্দীর জ্ঞান-গবেষণার অদ্বিতীয় সম্রাট। প্রাজ্ঞ ও বরণীয় এ ইমামকে কারাগারে নিক্ষিপ্ত করেও শত্রুরা তাঁর পিছু ছাড়েনি। লেখনী স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য কাগজ-কলম ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এদিকে তিনিও দমে যাওয়ার পাত্র নন। কয়লা দিয়ে কুড়িয়ে পাওয়া ছেড়া কাগজে লিখে গেছেন অব্যাহতভাবে। মুসলিম গবেষণার ইতিহাসে তাঁর সেসব লেখনী আজও মাইলফলক।।
গবেষণা ও লেখালেখির জগতে ব্যতিক্রমী ও প্রত্যয়দীপ্ত তরুণ। অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে ইতিহাসের অলিগলিতে ঘুরে বেড়ানো এবং নির্মোহ বিশ্লেষণে তথ্যবহুল উপস্থাপনার পাশাপাশি সত্যের উদঘাটন তাঁর লেখার প্রধান বৈশিষ্ট্য। কর্মজীবনে তিনি অভিজাত প্রকাশনী নবপ্রকাশের সিনিয়র গবেষক। ২০১৪ সন থেকে ইতিহাস-ব্যক্তিজীবনী, সিরাত, হাদিসতত্ত্ব, আকিদা-ফিকাহ ও সমকালীন একাধিক বিষয়ে আবদুল্লাহ আল মাসুমের কয়েকটি বই ইতোমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। এছাড়া তিনি গালফ বাংলা ডটকম, গালফ ট্রিক ডটকম ও ফ্রেশজবসনাও ডটকম ওয়েবপোর্টালে সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত। এর আগে ২০১৭ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার নিলাই-৭ জামে মসজিদের খতিব ছিলেন। উচ্চতর হাদিস বিভাগে অধ্যয়নের সময় একটি ওয়েব-সাইটে নিয়মিত প্রশ্নোত্তর লিখিতভাবে প্রকাশ করার ধারাবাহিকতায় বহুমাত্রিক বিষয়ে গ্রন্থ রচনায় নিযুক্ত আবদুল্লাহ আল মাসুম। তাঁর গ্রন্থাবলির মধ্যে 'হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি', 'হারুত-মারুত', 'সিরাতের প্রচলিত ভুল', 'আশারায়ে মুবাশশারা', হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি সিরিজ, 'ইবনে তাইমিয়ার জীবন ও অবদান', 'বিপ্লবী খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজ', 'বরেণ্য মণীষী সুফিয়ান আস-সাওরি', 'এসো তাজবিদ শিখি', 'রক্তে আঁকা কারবালা', 'মহাশূন্যের অভিযাত্রী' এবং 'ইসলাম ও আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা' উল্লেখযোগ্য। ২০০৮ সনে জামিয়া আরাবিয়া ফরিদাবাদ থেকে তাকমিল (মুমতাজ) এবং ২০১০ সনে ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা থেকে আত-তাখাসসুস ফি উলুমিল হাদিস (মুমতাজ) সমাপ্ত করেন। এরপর ২০২৩ সনে বাংলাদেশ বোর্ড অব ইউনানি এন্ড আয়ুর্বেদিক সিস্টেমস্ অব মেডিসিনের অধীনে তিব্বিয়া হাবিবিয়া কলেজ, ঢাকা থেকে ইউনানি চিকিৎসা বিজ্ঞানে দ্বিতীয় গ্রেডে উত্তীর্ণ হন। প্রচলিত ও গতানুগতিক ধারা সন্তর্পণে এড়িয়ে চলে প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজের পরিচয়।।