এক নিমীষেই আশ্রয়ের সব রাগ বরফের চেয়েও ঠান্ডা হয়ে গেলো। বরফ তো তাও গলে যায় কিন্তু সে লোহার মতো শক্ত বরফ হয়ে গেছে। তাকে বাড়ি মারলেও, সে আর এখন ব্যথার কোন অস্তিত্ব টের পাবে না। কেননা ‘বরফ হলো জড়ো পদার্থ। তার নিজের কোন জীবনী শক্তি নেই । খুব জোরে লোহা দিয়ে বাড়ি দিলে, সে হয়তো ভেঙ্গে পড়বে কিন্তু টের পাবেনা একটুও। টের পাওয়ার মতো কোন ক্ষমতাই, আল্লাহপাক বরফকে দেননি।
তিনি কিছু কিছু সময়, মানুষকে কি বরফের মতো জড়ো পদার্থ বানিয়ে, এতোটাই ক্ষমতাহীন আর অসহায় করে দিয়ে, নিজের 'অসীম ক্ষমতা' সম্পর্কে জানান দিয়ে যান? 'সত্যিকার ভালোবাসা সম্পর্কের কাছে, সবসময়ই প্রমাণিত। বয়ে চলা নদীর সাথে নিঃশব্দে চলা ছোট ছোট ঢেউ যেমন সত্যি। এ তেমনি এক সত্যি, যা প্রকাশ করে বোঝানো যায়না কখনোই'। 'সব ভালোবাসা প্রমাণিত হতে হবে, এমন কোন কথা নেই । কিছু কিছু সময় বরং অপ্রকাশিত ভালোবাসার শক্তি এবং ক্ষমতাই থাকে বেশী। যা মানুষ নিজেও টের পায়না। সময় বিশেষে শুধু অনুভব করতে থাকে দূরে থাকা যন্ত্রণাগুলি'। 'এই দূরে সেই দূরে নয়, নয় দূরত্বের দূরে, এই দূরে সেই দূরে সকল সাধ্যের বাইরে এক দূরে, সমস্ত অসাধ্যতায়'। ‘চোখের পানি আজ কিছুতেই বাঁধ মানছে না। খুব জোরে মন খুলে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে । মানুষ মনে মনে চেপে থেকে কতো সময় ধরে কাঁদতে পারে? মানুষের মন খুলে কাঁদতেও জীবনে স্বাধীনতা লাগে। না হলে মানুষ পাগল হয়ে যায়। জীবনের কাছেই জীবন আজ বড়ো অসহায়’। ‘যাদের কান্নার লোক আছে তাদের কাছে চোখের পানির কোনও মূল্য নেই। অথচ যাদের কান্নার লোক নেই, যারা চেয়েও পায়না; তাদের কাছে এই পানি শুধুই অমূল্য’।
লিওয়াজা আক্তার যশোর জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । মা হাজী মনোয়ারা বেগম । বাবা মৃত আব্দুল মজিদ খান ছিলেন একজন সেনা অফিসার । তিন বোনের মাঝে তিনি প্রথম । বর্তমানে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন । তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাসাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন । লিখছেন গল্প, কবিতা, উপন্যাস, গান । লেখালেখির শুরু কলেজ জীবন থেকেই । যার পূর্ণতা পায় ২০১৫ সালে একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত 'লাল স্বপ্ন নীল স্বপ্ন' গল্পগ্রন্থ দিয়ে । পরবর্তীতে ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর 'ছুঁয়ে যাওয়া হৃদয়ের আকুতি' দ্বিতীয় গ্রন্থ যেটি কাব্যগ্রন্থ । ২০১৮ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা প্রথম উপন্যাস 'কাজিয়া' । তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ 'লিওরিকা একজন প্রাক্তন' প্রকাশিত হয় ২০২১ এর বইমেলায় এবং ২০২২ এর বইমেলায় প্রকাশিত হয় তাঁর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ 'কবির কবিতায় কল্পনা কবি' । তিনি ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বিভাজনের ঊর্ধ্বে থেকে এই সমাজকে অবলোকন করেন । চিন্তা করেন মানুষের জীবন নিয়ে; যে জীবন পৃথিবীতে একবারই আসে । সৃষ্টিশীল কিছু করার মাঝেই আনন্দ খুঁজে পান, সে কারণে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নতুন নতুন সৃষ্টির পেছনেই দৌড়ে যেতে চান । লেখা যেনও তাঁকে নেশার মতো টানে তাইতো অন্য সব পরিচয়ের চেয়ে নিজেকে লেখক পরিচয় দিতেই তিনি বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন । ছোটবেলা থেকেই দেশ বিদেশ ভ্রমনের স্বপ্ন দেখতেন । ইতোমধ্যে অনেক দেশ ভ্রমণও করেছেন । লেখক হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন 'নয়নমণি কালচারাল এ্যাওয়ার্ড ২০১৫' । 'বেগম রোকেয়া সম্মাননা স্মারক ২০১৭' এবং 'আন্তর্জাতিক সোহাগী সাহিত্য সম্মাননা ২০২২' ।