"সুকুমার সাহিত্য সমগ্র ৩য়" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: সুকুমার সাহিত্য-সমগ্র’র প্রথম সংস্করণে লেখকের যাবতীয় নাটক দ্বিতীয় খণ্ডের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে তিন খণ্ডে সম্পূর্ণ সুকুমার সাহিত্যসমগ্র’র জন্মশতবার্ষিকী সংস্করণে বড়দের জন্য লেখা তিনটি নাটক-চলচিত্তচঞ্চরি, শ্রীশ্রীশব্দকল্পদ্রুম ও ভাবুক সভা—স্থানান্তরিত হয়েছে দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় খণ্ডে। কারণ সুকুমার রায়ের শিল্প সাহিত্য ভাষা ধর্ম প্রযুক্তি বিষয়ক যাবতীয় বয়স্কপাঠ্য মননশীল রচনা ও পত্রাবলী পূর্ব প্রতিশ্রুত তৃতীয় খণ্ডের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অবশ্য একথাও স্বীকার করতে হবে যে ধাঁধা ও হেঁয়ালি, আবােল তাবােল’-এর কিছু কবিতার পাঠান্তর ও ‘সাড়ে বত্রিশ ভাজা ইত্যাদি কিছু রচনা তৃতীয় খণ্ডের অন্তর্ভুক্ত, যার উপযুক্ত স্থান প্রথম দুই খণ্ড। কিন্তু পূর্ববর্তী সংস্করণের ক্রেতাদের প্রতি অবিচার হবে বিবেচনা করেই প্রথম দুই খণ্ডের সঙ্গে নতুন কোনাে রচনা বর্তমান সংস্করণে যুক্ত না করার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এই খণ্ডের অন্তর্ভুক্ত মণ্ডা ক্লাব’ সংক্রান্ত নথিপত্র, ‘সাড়ে বত্রিশ ভাজা’, নােটবইয়ের অংশ ও কিছু চিঠিপত্র কখনও প্রকাশিত হয়নি। মূল্যবান বহু প্রবন্ধ প্রথম প্রকাশের পর এই প্রথম একত্রে সংকলিত হচ্ছে। “শ্রীশ্রীবর্ণমালাতত্ত্ব’-র পূর্ণতর বয়ান ও তিনটি গান সমেত কয়েকটি কবিতাও তৃতীয় খণ্ডের বিশেষ আকর্ষণ।
উপেন্দ্ৰকিশোর রায়ের জ্যেষ্ঠ পুত্ৰ সুকুমারের জন্ম ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে। ১৯০৬-এ পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন দুই বিষয়েই অনার্স নিয়ে বি.এসসি পাশ করার পর ১৯১১-য় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গুরুপ্ৰসন্ন ঘোষ বৃত্তি লাভ করে মুদ্রণ বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য তিনি বিলেতে যান। লন্ডনে ও ম্যাঞ্চেস্টারে অধ্যয়ন করেন তিনি ও তাঁর গবেষণার জন্য সম্মানিত হন। ১৯১৩-য় উপেন্দ্ৰকিশোরের সম্পাদনায় ছোটদের সচিত্ৰ মাসিক পত্রিকা সন্দেশ’’ প্রকাশিত হয়। সুকুমার দেশে ফেরারী কিছুকাল পরে ১৯১৫-য় উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যু হয়। সুকুমার ইউ রায় অ্যান্ড সন্স কার্যালয়ের পরিচালনার এবং “সন্দেশ’ সম্পাদনার দায়িত্ব গ্ৰহণ করেন। “সন্দেশ’-এর পাতাতেই তাঁর অধিকাংশ ছোটদের লেখা-গল্প, কবিতা, প্ৰবন্ধ, ধাঁধা ইত্যাদি প্রকাশিত হয়েছে। শুধু নিজের লেখা নয়, ছবি এঁকেছেন তিনি। “হ য ব র ল’, ‘আবোল তাবোল’ জাতীয় আজগুবি চালের বেঠিক বেতাল ভুলের ভবের গদ্য ও পদ্য রচনা ছাড়াও শিল্প সাহিত্য ভাষা ধর্ম বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিষয়ক গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও সক্রিয় ছিল তাঁর লেখনী। আড়াই বছর কালাজ্বরে ভুগে ১৯২৩-এ মাত্র ৩৬ বছর বয়সে সুকুমার রায় ১০০ গড়পার রোডের বাড়িতে পরলোকগমন করেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগেও তিনি শুয়ে শুয়ে সন্দেশের জন্য ছবি এঁকেছেন, প্রচ্ছদ রচনা করেছেন, গল্প কবিতা লিখেছেন। আবোল তাবোল’-এর ডামি কপিাটাও রোগশয্যায় তৈরি করেছেন। কিন্তু বইটি ছেপে বেরোবার ন” দিন আগে তাঁর মৃত্যু হয়।