সমগ্র সমূহ *ভয়ংকর সুন্দর *সবুজ দ্বীপের রাজা *পাহাড় চূড়ায় আতঙ্ক *খালি জাহাজের রহস্য *মিশর রহস্য *কলকাতার জঙ্গলে
ভয়ংকর সুন্দর বইয়ের সামারিঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর লেখা কাকাবাবু সিরিজের প্রথম বই ভয়ংকর সুন্দর। কাকাবাবুর আসল নাম 'রাজা রায়চৌধুরী'। কাকাবাবু মধ্যবয়সী অবসরপ্রাপ্ত শারীরিক প্রতিবন্ধী এক মানুষ, যিনি অসম্ভব সাহসী ও পণ্ডিত ব্যক্তি। তিনি ভারত সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা যিনি একবার আফগানিস্তানে কামাল নামে এক বন্ধুকে দুর্ঘটনার কবল থেকে বাঁচানোর চেষ্টায় পঙ্গু হন। সব গল্পেই কাকাবাবুর সাথী ক্রাচ। গল্পে তাঁর সঙ্গী তাঁর ভাইপো সন্তু ওরফে সুনন্দ। সে ক্লাস এইট এ পড়ে। গল্পে কাকাবাবু কাশ্মীরের পহেল্গ্রামে ঘুরতে যান। সবাই জানে উনি সেখানে গন্দক এর খোঁজে গিয়েছেন। কিন্তু সেখানকার প্রভাবশালী ব্যক্তি সূচা সিং ভাবে উনি সোনার খোঁজে এসেছেন। কাকবাবু সন্তু কে নিয়ে প্রতিদিন পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় মাপামাপি করে বেড়ান। সন্তু চাইলেও কাকবাবুর কাজের কারণে কোথাও ঘুরতে যেতে পারে না। আসতে আসতে তাঁরা গ্রামের ভেতরের দিকে যায়, সেখানেই তাঁরা কিছু দিন থাকে। গ্রামের মানুষদের সাথে তাদের খুব ভাব হয়ে যায়, সেখানে তাঁরা হাকো নামে এক অদ্ভুত ভূতের গল্প শোনে। রাজার একদূত এই পথে ঘোড়ায় চড়ে যাওয়ার সময় এক গুহায় পড়ে মারা যায়, সেই লোকের ভূত নাকি এখনো এই গ্রামে রাতের ঘোড়া চালিয়ে বেড়ায়। এমন অদ্ভুত গল্প শুনে কাকাবাবু বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠেন, এক সময় তাঁরা সেই গুহা খুঁজে পান। তারপর হয়ে উঠে ইতিহাস...। সেই ইতিহাস জানতে পড়তে হবে এই বই। প্রথম বই হিসেবে শেষ দিককার রোমাঞ্চকর ঘটনা বেশ মন কাড়বে। কিশোর-কিশোরী যারা থ্রিলার অ্যাডভেঞ্চার বই পড়তে পছন্দ করে তাদের জন্য সেরা বই।
পাহাড় চূড়ায় আতঙ্ক বইয়ের সামারিঃ এই গল্পে কাকাবাবু ও সন্তু এবার কাশ্মীরে। এভারেস্ট চড়বেন এই আশায় এসেছেন। আদতে কাকাবাবু সঙ্গে এনেছেন এমন একটা দাঁত, যা সাধারন কোন মানুষের দাঁত হতে পারে না, বেশ বড় তবে অন্য কোন প্রাণীর ও না এটা নিশ্চিত। রহস্যের শুরু হয় নি এখোনো, ৭ দিন ধরে তাঁরা অনেক পুরনো এক গম্বুজে বসে দুরের কালাপাথর পাহাড় কে দুরবীন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। সেখানে তাঁরা শেরপাদের কাছ থেকে ইয়েতি নামে এক ভয়ংকর প্রাণী সম্পর্কে জানাতে পারেন। যারা সহজেই অদৃশ হয়ে যেতে পারে। কাকাবাবু যেই দাঁত নিয়ে এসেছেন সেইটি মূলত ৩টা ছিলো। তাঁর একটি আবার কেইন শিপটন নামে একজন এখানে নিয়ে এসে অদৃশ হয়ে যায়। জেদি মানুষ কাকাবাবু সেই রহস্য উদ্ধার করবেন ই। উনি সবাই কে নিয়ে সেই কালাপাথর পাহাড়ে রওনা দেন, পথিমধ্যে কাকাবাবু অদৃশ্য হয়ে যান। সেখান থেকে দূরে তাঁর ক্রাচ পড়ে থাকতে দেখা যায় ও বরফে দেখা যায় রক্ত। সেখান থেকেই শুরু হয় মুল রহস্য। জানতে হলে পড়তে হবে বইটি।
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।