মহাগ্রন্থ আল কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর রাসুলের ওপর নাজিলকৃত আসমানী কিতাব যা বর্ণিত হয়েছে আরবী ভাষায়। কুরআন যেহেতু আল্লাহ কর্তৃক সরাসরি আরবী ভাষায় নাজিলকৃত, তাই ভিন্ন ভাষায় এর মহিমাকে অক্ষুণ্ণ রেখে অনুবাদ করা কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। তবে আন্তরিকতা ও নিবিষ্টচিত্তে এর মর্মবাণী উপলব্ধি করতে চাইলে তা যে কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব। কারণ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের হেদায়েতের জন্যই কুরআন নাজিল হয়েছে। কুরআনকে বুঝে পড়ার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। বাজারে যে সমস্ত বাংলা অনুবাদ গ্রন্থ রয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই শাব্দিক তরজমাভিত্তিক হওয়ায় আয়াতসমূহের বাংলা অনুবাদ অনেক ক্ষেত্রেই সহজবোধ্য হয় না এবং আল্লাহর বাণীসমূহ অনুধাবন করতে গিয়ে পাঠকবৃন্দকে বেশ বেগ পেতে হয় এবং তারা অনেকাংশেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এ বিষয়টি মাথায় রেখে কুরআনের হুবহু তরজমার পরিবর্তে আল্লাহর মূল বক্তব্যসমূহকে অবিকৃত রেখে শব্দবিন্যাস ও বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী সাবলীল ও সহজ ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে 'কুরআনের আলোকবর্তিকা- আয়াতভিত্তিক বাংলা মর্মবাণী' গ্রন্থটি প্রণয়ন করা হয়েছে। গ্রন্থটিতে মর্মবাণী সাজানোর ক্ষেত্রে বিষয়বস্তু বিবেচনায় এনে কোনক্ষেত্রে একটি, কোনক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক আয়াতসমূহকে একই প্যারার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে বিষয়ের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে এবং পাঠককূলের বুঝতে সুবিধা হয়। প্রত্যেক সূরার মর্মবাণী শুরু করার পূর্বে উক্ত সূরার আলোচ্য বিষয়সমূহ সংক্ষিপ্ত পরিসরে তুলে ধরা হয়েছে। যেহেতু কুরআন আল্লাহর নিজস্ব ভাষায় বর্ণিত, তাই বর্ণনাভঙ্গী, শব্দবিন্যাস ও বাক্য গঠনের ক্ষেত্রেও কুরআনের বৈশিষ্ট্য ভিন্নতর। তাই বুঝার সুবিধার্থে আল্লাহর মূল বক্তব্যকে অবিকৃত রেখে শব্দবিন্যাস ও বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী সাবলীল ও সহজভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। বড় আয়াতগুলোর ক্ষেত্রে আয়াতের মূল বিষয়টিকে ঠিক রেখে উপযুক্ত ভাষা প্রয়োগের মাধ্যমে তা কিছুটা সংকুচিত করা হয়েছে যাতে আয়াতের মর্মবাণী সুন্দর ও সহজভাবে প্রস্ফুটিত হয়। বাংলা ভাষায় কুরআনকে অনুধাবন ও উপলব্ধি করার লক্ষ্যে সংকলিত এই 'মর্মবাণী' গ্রন্থটি পাঠককূলের জন্য যথেষ্ট সহায়ক হবে বলে আমরা আশাবাদী।
জন্ম রাজশাহী শহরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। শৈশব ও শিক্ষাজীবন কেটেছে রাজশাহীতে। ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। চাকুরী জীবনের শুরুটা হয় শিল্পব্যাংক (বর্তমানে বিডিবিএল) থেকে। ডিজিএম হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে প্রাইম ব্যাংকে যোগদান করেন এবং সেখানে গুরুত্বপূর্ণ পদে সাত বছর চাকুরীর পর অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর আরও ৩টি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে প্রায় চার বছর কাজ করেন। তাঁর পিতা একজন শিক্ষাবিদ হলেও তিনি ছিলেন একজন ক্বারী। তাঁর তত্ত্বাবধানেই পারিবারিকভাবে তারা ইসলামী চর্চা ও অনুশাসনের মধ্যে দিয়ে গড়ে ওঠেন ছোটবেলা থেকেই। একজন অর্থনীতিবিদ হয়েও তিনি ইসলামী জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে রাজশাহী ডিভিশনের ক্বিরাত প্রতিযোগীতায় তিনি প্রথম হন। এরপর কুরআন বুঝা এবং তা অনুধাবন করার ব্যাপারে তার ব্যাপক আগ্রহের প্রেক্ষিতে তিনি কুরআন অনুশীলনের ধারাবাহিক কার্যক্রম ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। কুরআন বুঝে পড়া এবং জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধানসমূহ বাস্তবায়নের মধ্যেই রয়েছে দুনিয়াবী কল্যাণ ও পারলৌকিক সফলতা। এ বিষয়টি মাথায় রেখে তিনি কুরআন ভিত্তিক গ্রন্থ রচনা শুরু করেন এবং এ পর্যন্ত তিনি কুরআন ভিত্তিক চারটি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। 'কুরআনের আলোকবর্তিকা- আয়াতভিত্তিক মর্মবাণী' গ্রন্থটি তার সর্বশেষ সংযোজন, যাতে পবিত্র কুরআনের বাণীসমূহকে মানুষের কাছে সহজবোধ্য ও সাবলীল ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে যেন মানুষ পরিপূর্ণরূপে কুরআনের আলোয় নিজেকে উদ্ভাসিত করার সুযোগ পায়। আল্লাহ তাঁর এই প্রচেষ্টা কবুল করুন।