যদি আজ শহিদ হই, তবে আমার নিথর দেহটা রাজপথে ফেলে রাখবেন। ছাত্রসমাজ যখন বিজয় মিছিল নিয়ে ঘরে ফিরবে, তখন আমাকেও বিজয়ী ঘোষণা করে দাফন করবেন। একজন পরাজিতের লাশ কখনও তার মা-বাবা গ্রহণ করবে না।’ – বলা ছেলেটার মেধার বিনিময়ে দেখা স্বপ্নের চোখে বুলেট লেগেছিল। আর একটা বুলেটেই স্বপ্নের দাফন কাফন হয়েছে। কালো গেঞ্জি পরা ছেলেটা পুলিশের সামনে সিনাটান করে দাঁড়িয়েছিল। অপরাধ নেই, অধিকার চেয়েছিল শুধু। পুলিশ তাকে রক্ষা করার বদলে গুলি করেছে। লাগাতার গুলি। একটা গুলি লাগে কোমড়ে। প্রথমে ছেলেটা বুঝতে পারেনি। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়েছিল কোমড়ের দিকে। মাত্র একবার। তারপর আবার দুই হাত প্রসারিত করে বুক টান করে দাঁড়িয়েছিল। ডান হাতে ছোট্ট একটা লাঠি। গুলি! গুলি! আবারো গুলি! ছেলেটা টলছে। পড়বে পড়বে ভাব। তবুও চেষ্টা সোজা হয়ে দাঁড়ানোর, কিন্তু পারল না। মেরুদণ্ড সোজা থাকলেও শরীরটা মাটির দিকে ক্রমশ অগ্রসর হতে থাকে। তারপর ঝুলে পড়ে পিচে। যে ছেলেটা কিছুক্ষণ আগেও বুক চেতিয়ে দাঁড়িয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিল, সে এখন অসাড়। যেন ঝুলে আছে শূন্যে। যেভাবে বছরের পর বছর চাকুরির খাতায় ঝুলেছিল মেধাবীদের ভাগ্য। রাতে বাড়ি যাওয়া কথা ছিল ছেলেটার। মা অপেক্ষা করছে, বোন অপেক্ষা করছে। অতঃপর রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছেলেটা নিশ্বাস বন্ধ করে। শহিদ হয়। মা যখন জানতে পারে ছেলে তার আসমানে, কলিজা ফুঁড়ে যায়, আরশ কেঁপে উঠে। মা তার সহজসরল প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, “তোরা মোর ছাওয়াক চাকরি না দিবু, না দে। কিন্তু মারলু ক্যানে?