এক ছিল এক ট্রেন আর এক ছিল এক দু’তলা লঞ্চ। উভয়েই যাত্রি পরিবহন করে। কিভাবে যেন তাদের মধ্যে পরিচয় হলো এবং তার বন্ধুত্ব। তাদের মধ্যে প্রায়শই ভাব বিনিময় হতো। একদিন লঞ্চ বলল, “ট্রেন বন্ধু, আমার জন্মই হয়েছে মানুষের সেবা করার জন্য। আমি যাত্রি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাই। এটাই আমার কর্ম।” ট্রেন বলল, “হ্যাঁ বন্ধু, তুমি ঠিকই বলেছ। তবে আমিও মানুষের সেবা করি। যাত্রিদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে তাদের উপকার করে থাকি।” লঞ্চ বলল, “কিন্তু বন্ধু, আমার না খুব কষ্ট হয়। শুধু পরের জন্য খেটে যাই। কিন্তু তার বিনিময়ে নিজে কি বা পাই। আমার সারাজীবন শুধু কষ্টে কাটে।” ট্রেন বলল, “কিন্তু বন্ধু, আমার কষ্ট হয় কি না তা তোমার মতো ভেবে দেখিনি। যদি কোন কষ্টও থাকে মনে, তবে আমি যখন ঝক-ঝকা-ঝক শব্দ তোলে চার পাশ দেখতে দেখতে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে ছুটি, আবার একই শব্দ তুলে ঢাকায় ফিরে এসে বিশ্রাম করি, তখন আমার মনে আর কোনো কষ্ট থাকে না। সত্যি কথা বলতে, আমি কাজটাকে কাজ মনে না করে সেটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করি।” ট্রেনের কথাগুলো কেন জানি লঞ্চের পছন্দ হলো না। লঞ্চ বলল, “দেখ ট্রেন ভাই, তুমি কিন্তু মানুষদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে বেড়াও। আর আমি তোমার চেয়ে বেশি কাজ করি। আমি বিভিন্ন ধরনের মালপত্র বহন করি।” ট্রেন বলল, “তা বটে। তবে তুমিতো আগেই বলেছিলে, মানুষের সেবার জন্যই তোমার জন্ম। আর এসব মাপত্রগুলো তো মানুষেরই। তবে এখন এরকম কথা কেন বলছো?” ট্রেনের কথা লঞ্চের ভালো লাগলো না। তার মনে অহংকার তৈরি হলো। সেটা বড়ত্বের অহংকার। সে বলল, “ট্রেন তুমি কিন্তু সামান্য একতলা বগির তৈরি একটি পরিবহন মাত্র। আর আমি দু’তলা লঞ্চ। আমি তোমার থেকে উঁচু।” লঞ্চের কথায় ট্রেন কিছু মনে করেনি। যদিও সে বলতে পারতো আমি তো তোমার চেয়ে লম্বা। ট্রেনের মনে অহংকার ছিল না। অপর দিকে অহংকারী লঞ্চ ট্রেনের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলো। ট্রেন যেচে কথা বলতে চাইলেও লঞ্চ পাত্তা দিতো না। তাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরল এবং সম্পর্কের অবনতি ঘটলো। লঞ্চ মনে মনে ঠিক করল ট্রেনকে একটা উচিত শিক্ষা দিবে। সে ঠিক করল ঢাকা ও ময়মনসিংহের মাঝখান দিয়ে কাওরাইদ ও গয়েশপুর হয়ে যে সুতিয়া নদী বয়ে গেছে, সেই সুতিয়া নদীতে এসে সে অপেক্ষা করতে থাকবে, সুতিয়া নদীর উপর যে রেলব্রিজ রয়েছে, যেই ট্রেন তা অতিক্রম করবে ঠিক তখনই সে দ্রুত এসে তার উঁচু মাথা দিয়ে জুড়ে ট্রেনকে ধাক্কা মারবে। আর এতে ট্রেন ধপাস করে রেলব্রিজ থেকে নদীতে পরে যাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী লঞ্চ তার গন্তব্যে এসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। একটু পরেই দুর থেকে ঝক-ঝকা-ঝক শব্দ তুলে যখন ট্রেন রেলব্রিজে উঠল, ঠিক তখনই লঞ্চ দ্রুত এসে জুড়ে তার উঁচু মাথা দিয়ে ট্রেনকে ধাক্কা মারলো। আর সেই আঘাত গিয়ে লাগল রেলব্রিজের শক্ত লোহার মধ্যে। ট্রেনের গায়ে ছোঁয়াও লাগলো না। ট্রেন রেলব্রিজ নিরাপদেই পার হয়ে গেল। অপরদিকে লঞ্চ রেলব্রিজের শক্ত লোহায় প্রচন্ড হোঁচট খেয়ে ঘুরতে ঘুরতে নদীতে তলিয়ে গেল।
শামসুল আরেফিন-বাংলায় মহন্ত রবি, জন্ম। নওগাঁ শহরের উকিল পাড়ায় দাদার বাড়িতে।। মাঘ মাসের বৃষ্টি ভেজা তীব্র শীত রাতে।। বাড়ির পাশের কৃষ্ণধন হাইস্কুল থেকে। এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। স্কুল ম্যাগজিন সাধনায় লেখালেখির শুরু। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া নওগাঁতে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে সম্মানসহ আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর। শহীদুল্লাহ হলের। আবাসিক ছাত্র ছিলেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প প্রকাশিত হয়েছে। ঢাবিতে পড়াকালে অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার। বাণীর ছােটদের বিভাগ শাপলা কুঁড়ির। কেন্দ্রীয় আসরের সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। লেখাপড়া শেষে সংক্ষিপ্ত আইনজীবী জীবন। 'ঢাকা বার ও নওগাঁ বারের সদস্য ছিলেন। দাদা ব্রিটিশ যুগের আইনজীবী হলেও আইন। পেশা তার ভালাে লাগেনি। তাই সেই পেশাকে বিদায় জানিয়ে বিচার বিভাগে যোগদান করেন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচারক হিসাবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্বপালন করেন। ২০১৫ সালে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ হিসাবে অবসর নিয়েছেন। ২০১৪ সালে পবিত্র হজ পালন করেন। আমাকে ছাড়া অনেক কিছু তার প্রথম কবিতার বই। পৈতৃক শহর নওগাঁ ও দীর্ঘ বিচারক জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখালেখির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।