“রাশিয়ান লেখক আলেক্সান্দর বেলায়েভের অসাধারণ একটা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ‘উভচর মানুষ’। বিজ্ঞান নিয়ে একটা কল্পিত কাহিনিতে লেখক মানবতা, প্রেমের সৌন্দর্য, মানবকল্যাণে বিজ্ঞান ও ধর্মান্ধতাসহ নানা বিষয় দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।” এই উপন্যাসটি আর্জেন্টিনার বুয়েনাস-আইরেসের প্রেক্ষাপটে লেখা। স্পেনিশ বংশোদ্ভূত আর্জেন্টেনীয় সার্জন সালভাতর অঙ্গ সংস্থানসহ বিভিন্ন জৈবিক গবেষণা করতেন। এর পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন রেড-ইন্ডিয়ান রোগীর চিকিৎসা করতেন। রেড-ইন্ডিয়ানদের কাছে তিনি ভগবান-তুল্য। তাঁর খ্যাতির জন্য পুরো দক্ষিণ আমেরিকা থেকে রেড-ইন্ডিয়ান রোগী আসতো চিকিৎসা নিতে। একদিন তাঁর কাছে এমন এক রেড-ইন্ডিয়ান শিশুকে নিয়ে আসা হয়, যাকে বাঁচানো ছিল অসম্ভব। তার শ্বাসক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করছিল না। তাকে বাঁচানোর জন্য সালভাতর বাচ্চা হাঙরের কানকো সংস্থান করেন। এর ফলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়। কিন্তু তাকে এজন্য অনেকটা পানিতে থাকতে হবে এবং ডাঙায় শ্বাস নিতে হবে। সেই সময় ঐ শিশুর পিতা বালতাজারকে বলা হয় শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু একসময় বালতাজার ঠিকই জানতে পারে যে, তার ছেলে বেঁচে আছে। ‘দরিয়ার দানো’ই তার ছেলে। সালভাতর এই মৎস্যপুরুষ বা উভরচর মানুষের নাম রাখেন ইকথিয়ান্ডর। আলেক্সান্দর বেলায়েভের অন্যান্য কাজের মতো এই উপন্যাসেও মানুষের শারীরিক পরিবর্তনের পর তার বেঁচে থাকার সম্ভবনা নিয়ে রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হয়। এছাড়াও উপন্যাসটিতে সমাজতন্ত্রের ধারণার ছোঁয়া পাওয়া যায়।
আলেক্সান্দর বেলায়েভ ১৮৮৪ সালে একটি গোঁড়া পুরােহিত পরিবারে রাশিয়ায় স্মেলেনস্কে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুল শেষ করে আইন কলেজে ভর্তি হন। সে সময় তার বাবা মারা যান। ১৯০৬ সালে আইনজীবী হন এবং ভাল খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন এবং বিশ্ব ভ্রমণে বের হন। এই সময়ে তিনি লেখালেখি শুরু করেন এবং ১৯১৪ সালে সাহিত্য সাধনায় মনােনিবেশ করার জন্য ওকালতি ছেড়ে দেন। ৩০ বছর বয়সে বেলায়েভ হারের ক্ষয় রােগে আক্রান্ত হন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি ইয়াল্টায় চলে আসেন।। ১৯২২ সালে তিনি রােগমুক্ত হন এবং চাকরি খুঁজতে থাকেন। তিনি পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে একটি খণ্ডকালীন চাকরি করেন। ১৯২৩ সালে মস্কোতে আবার আইন ব্যবসা শুরু করেন। একই সাথে বেলায়েভ বিজ্ঞান কল্প উপন্যাসের লেখক হিসেবে তাঁর সাহিত্যিক কার্যকলাপ আবার শুরু করেন। ১৯২৫ সালে তাঁর প্রথম সায়েন্স ফিকশন প্রফেসর ডােয়েলের মস্তক' (Professor Dowell's Head) প্রকাশিত হয়, সঙ্গে সঙ্গেই বিখ্যাত হয়ে যান তিনি। তারপর একে একে বের হয় ‘দরিয়ার দানাে’, ‘মৎস্যকুমার’, ‘উভচর মানুষ’, ‘জাহাজ ডুবির দ্বীপ’, ‘শূন্যে ঝাপ’ প্রভৃতি জনপ্রিয় বই। বেলায়েভ ছিলেন সােভিয়েত সায়েন্স ফিকশনের পথিকৃত। এজন্য তিনি রাশিয়ার জুল ভার্ন’ বলে খ্যাত ছিলেন। পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, মহাকাশ যাত্রার নানা সমস্যা নিয়ে লেখা অর্ধশতাধিক বই দিয়ে গেছেন তিনি। ১৯৩৪ সালে এইচ জি ওয়েসের ইউএসএসআর সফরকালে লেনিনগ্রাদে বেলায়েভ তার সাথে দেখা করেন। জীবনের শেষ বছরগুলােতে বেলায়েভ পুশকিনের পূর্ব লেনিনগ্রাডে বাস করতেন। ১৯৪২ সালে সােভিয়েত শহর পুশকিন নাৎসিদের দখলে থাকা অবস্থায় অনাহারে মারা যান বেলায়েভ। তার কবরের সঠিক অবস্থান জানা যায়নি। পুশকিন শহরে কাজানস্কো কবরস্থানে একটি স্মৃতিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে তার মরদেহ সমাহিত করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।