একটি সংসারের অভিভাবক হিসেবে স্বামীর গুরুত্ব অপরিসীম। একজন স্বামী তার স্ত্রীর ভরণ পোষণের জিম্মাদার। তার দেখা-শোনা, খানা-পিনা, পোষাক-আষাকসহ মৌলিক বিষয়াদী সমূহ পাবার হক একজন স্ত্রী রাখে । কেননা, বিবাহের কবুল বলার পর আপনি তার ভরণপোষণ বিষয়ে অবগত হয়েছেন এবং তার সকল দায় দায়িত্ব পালনে আপনি অঙ্গিকারবদ্ধ হয়েছেন। অতএব, স্বামী হিসেবে তার এই হক আদায় শুধু জরুরী নয় বরং ওয়াজিব। আপনি স্বামী হিসেবে তার সাথে সুন্দর ব্যবহার করবেন, কারণ একজন স্ত্রী স্বামীর কাছে এমন আচরণই আশা করে । নিজেদের মধ্যে সাংসারিক বিষয়ে ছোট-খাটো ত্রুটি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে আপনি স্বামী হয়ে তাকে এমন কোনো কথা বলবেন না; যাতে সে মনে কষ্ট পায়। মনে রাখবেন, নারী জাতি এমন এক জাতি; তাকে সোজা করতে গেলে আপনি নিজেই সোজা হয়ে যাবেন কিন্তু স্ত্রীকে সোজা করতে পারবেন না । কেননা নারীর অধিকাংশ হাড়ের গঠনই বাঁকা। আপনি পুরুষ হিসেবে আপনার আকল, বিবেক, বুদ্ধি নারীদের তুলনায় অনেক তীক্ষ্ণ । অনেক চিন্তা-ভাবনা, যাচাই-বাছাই এর মাধ্যমে একজন পুরুষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু নারী জাতি এমন এক জাতি, তারা যে বিষয়ে ভাল বোঝে, সেই বিষয়ে তার আগ্রহ প্রকাশ করে। এমনকি তাকে সুপরামর্শ দিলেও শুনবে না। তার মন যা বলবে, তাই সে করবে। অতএব একজন পুরুষ হিসেবে তাকে কিছু স্বাধীনতা দিন, যাতে এ বিষয় থেকে সে নিজেই অনুধাবন করতে পারে যে, কোনটি ঠিক আর কোনটি ভূল । আপনি সরাসরি তার ভূল শুধরে দিতে যাবেন না, এতে আপনি নিজেই বিপদে পড়বেন। যদি আপনার স্ত্রী এমন কিছু করে বসে, যাতে তার ক্ষতির আশংকা রয়েছে তবে স্ত্রীকে আপনি খোলামেলা স্থানে বসিয়ে নম্রভাবে তার ভূলত্রুটি বুঝিয়ে বলুন এবং শান্তভাবে সমাধানের চেষ্টা করুন। যেমনটি একজন পিতা তার ছোট্ট শিশুকে লেখাপড়া শেখায়। আপনার স্ত্রী আপনার এমন মনোমুগ্ধ আচরণ ও সহমর্মিতা দেখে সে আবেগী হয়ে পড়বে এবং আপনার প্রতি যদি তার বিদ্বেষপূর্ণ কোন মনোভাবও থাকে, তবে এই আচরণের দ্বারা সে তার নিজের মত পাল্টাতেও কার্পণ্য করবে না।। মনে রাখবেন, আপনি তার সবচেয়ে আপন; স্ত্রী আপনার কাছে অনেক কিছুই আশা করে কিন্তু পুরুষের মত মুখ ফুটে সব কিছু খোলাখুলি বলতে সাহস পায় না। কেননা, এটি নারীর বিশেষ স্বভাবজাত গুণ । আপনি স্ত্রীর সাথে এমনভাবে সম্পর্ক স্থাপন করুন, যাতে সে আপনাকে কোনো প্রকার ভয়-ভীতি ছাড়াই খোলাখুলি ভাবে সব কথা প্রকাশ করতে পারে। যদি নিজেদের মধ্যে এমন মনোভাব না থাকে, তাহলে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক অনেক দূরত্বে ঠেলে দেয়। পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস উঠে যেতে থাকে এবং নিজেদের মধ্যে সন্দেহের বীজ তৈরী হয়। এমতাবস্থায় সংসারে ফাটল সৃষ্টি হতে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না। অতএব, সকল কিছু মাথায় রেখে, একজন পরিবারের অভিভাবক হিসেবে স্ত্রীকে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিন । তার সাথে সহমর্মিতা প্রদর্শন করুন, মাঝে মাঝে স্ত্রীর সাথে গল্প-গুজব ও রোমাঞ্চকর পরিবেশ তৈরী করুন। কেননা নারীরা এমনটিই স্বামীর কাছে বেশি আশা করে থাকে ।। ধর্মীয় কাজে তাকে পাচঁ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত ও ইসলামের মৌলিক বিষয়ে অবগত করুন। স্ত্রীকে এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করবেন না, যাতে সে এ সকল বিষয়কে বোঝা মনে করে। আপনি স্ত্রীর মনের গভীরে যেতে চেষ্টা করুন, দেখবেন আপনার স্ত্রীও আপনার মনের গভীরে যাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে। কারণ তার মধ্যেও রয়েছে আশা-আকাঙ্খা ও স্বপ্ন পুরণের বাসনা। হ্যাঁ যদি দেখা যায়, সে শরীয়তের বরখেলাপ কাজ করছে, তবে তাকে এ বিষয়ে সতর্ক ও শাসন করুন। কিন্তু এমনভাবে প্রহার করবেন না যাতে সে আপনার থেকে বিচ্ছিন্ন হবার চেষ্টায় ঝুঁকে পড়ে।। স্ত্রীর বাবা মা তথা শ্বশুর শাশুরীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখুন, মাঝে মাঝে কিছু হাদিয়া পাঠান এবং নিয়মিত খোজ খবর রাখুন। এতে আপনার প্রতি আপনার স্ত্রীর শ্রদ্ধা বেড়ে যাবে। মাঝে মাঝে স্বামী-স্ত্রী মিলে শ্বশুড়ালয় ঘুরে আসুন। স্ত্রীর ত্রুটিবিচ্যুতি থাকা স্বত্বেও তার দোষ না খুজে বরং তার প্রশংসা করুন। আপনি দেখবেন আপনার স্ত্রীও আপনার এমন গুণে মুগ্ধ হয়ে আপনার প্রশংসা করবে। নিজেদের দাম্পত্য কলহ সমাধানের জন্য নিজেদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখবেন, স্ত্রী আপনার, সংসারও আপনার। যদি আপনি সংসারকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে না পারেন তবে আপনি হবেন এক ব্যর্থ স্বামী ও অভিভাবক। অতএব, সুখময় দাম্পত্য জীবন উপহার পেতে হলে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় ছাড়া বিকল্প কিছু আর হতে পারে না।