বন্ধুদের কাছে জীবনের অন্যতম কঠিন অথচ মধুর স্মৃতির কথা শোনাতে গিয়ে বলল, প্রথম দেখায় পছন্দ হলো না। দেখতে শুনতে অতটা ভালো নয়। যেমনটা শুনেছি, তার সাথে মিল নেই। মুখে কিছু না বললেও মনে মনে স্থির করে ফেলেছি: কৌশলে পাশ কাটিয়ে যাবো। মেয়েটার যেন মন না ভাঙে। তার পরিবারও যেন কষ্ট না পায়। বিয়ে যেহেতু করব না, তাই কুশল বিনিময় ছাড়া মেয়েটাকে বাড়তি আর কোনো প্রশ্ন করলাম না। একদম কোনো কিছু না বললে খারাপ দেখায় বা মেয়েটা অপমানিত বোধ করতে পারে, তাই প্রাথমিক কিছু প্রশ্ন করেছি। উঠার উপক্রম করছি, বিদায়ের অনুমতি চাইব—এমন সময় মেয়ের বাবা কামরায় এলেন। মেয়ের পাশটিতে গিয়ে বসলেন। মেয়ে বাবার কানে কানে কিছু একটা বলল। বাবা স্মিতহাসিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, -আমার মামণি বলছে, তোমার কাছে তার একটা বিষয় জানার আছে। তোমার যদি আপত্তি না থাকে। -জি, অবশ্যই। -তুমি কি আজকের ফজর নামাযটা মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে পড়েছ? বাবার প্রশ্ন শুনে চট করে মেয়ের দিকে তাকালাম। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কামরায় প্রবেশ করার পর আমার দিকে একবার তাকিয়েই সেই যে নিচের দিকে তাকিয়েছে আর চোখ তোলেনি। আমার বুকের রক্ত ছলকে উঠল। কেন যেন ভয় লাগতে শুরু করল। যতদূর জানি, আমি আন্তরিকভাবে ধর্ম পালন করার চেষ্টা করি—এমন কথাই আমাদের বাড়ি থেকে জানানো হয়েছে। মেয়ের বাবাও আমার ধর্মকর্ম বিষয়ক তথ্যে বেশ আশ্বস্ত বলে মনে হয়েছে। তিনি আমাদের বাড়িঘর দেখতে গিয়ে আমাকে মসজিদে পেয়েছিলেন। তিনি অবশ্য না জানিয়েই গিয়েছিলেন। আমাদের কারো সাথে দেখাও করেননি। আমাকে মসজিদে দেখে বোধহয় যা বোঝার বুঝে নিয়েছেন। যাক, ভেবেছিলাম আমার চাকরিবাকরি ও বেতন-স্যালারি নিয়ে প্রশ্ন হবে। শিক্ষাদীক্ষা নিয়েও প্রশ্ন হতে পারে। কিন্তু মেয়ের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন দিক থেকে অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন ছুটে এসেছে। একবার ভাবলাম মিথ্যা বলি। বিবেকে বাধা দিল। সত্যটাই বললাম, -জ্বি, ফজর পড়েছি। মসজিদে যেতে পারিনি, ঘরে পড়েছি। বুক ধুকপুক করতে লাগল.....