মূল লেখক পরিচিতি হেদায়াতুন নাহব কিতাবের লেখক ছিলেন অত্যন্ত মুখলিস মনীষী। তাই তিনি নিজের নাম কিতাবের কোথাও উল্লেখ করেননি। অন্যদেরকেও তাঁর নাম প্রচারের সুযোগ দেননি। এ কারণে গ্রন্থকারের সঠিক পরিচয় জানা যায়নি। তবে 'হৈদায়াতুল বাহিয়্যাহ' গ্রন্থের লেখকসহ কেউ কেউ সিরাজুদ্দীন আওদীর নাম উল্লেখ করেছেন। আবার কেউ কেউ ইবনে হাজেব তথা কাফিয়ার লেখকের নাম উল্লেখ করেছেন। تعداد العلوم গ্রন্থের লেখক 'হেদায়াতুন নাহব' এর আলোচনা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন যে, হেদায়াতুন নাহব লেখকের নাম সিরাজুদ্দীন উসমান। যিনি আঁখি সিরাজ নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি ছিলেন সুলতানুল মাশায়েখ হযরত নিযামুদ্দীন (রহ)-এর দীক্ষাপ্রাপ্ত সুযোগ্য খলিফা এবং বিখ্যাত আলেম শায়খ আলাউল হক বাঙ্গালীর মুরশিদ। তাঁর শৈশবকাল সম্বন্ধে কোন স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। BIN শিক্ষা জীবন: তিনি যখন সবেমাত্র তরুণ, এখনো মুখমণ্ডলে শ্মশ্রু রেখা ফুটে উঠেনি, তখনই তিনি আত্মশুদ্ধির চিন্তা-চেতনা নিয়ে বঙ্গদেশ থেকে শায়খ নিযামুদ্দীন (রহ)-এর দরবারে উপস্থিত হন। কিন্তু আধ্যাত্মিক জ্ঞানে তার স্থান ঊর্ধ্বে হলেও বাহ্যিক ইলম থেকে তিনি রইলেন বঞ্চিত। শায়খ নিযামুদ্দীন (রহ)- এর নির্দেশে যখন খেলাফত প্রদানের জন্যে দীক্ষাপ্রাপ্তদের নাম তালিকাভূক্ত করা হলো, তখন শায়খ সেখানে আলী সিরাজের নাম দেখে বললেন, ইসলাহ ও তারবিয়তের কাজে সর্বপ্রথম ইলম আবশ্যক, আর আলী সিরাজ ইলম সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। শায়খ মূলতানুল মাশায়েখের এ উক্তি শুনে তাঁর এক বিশেষ শাগরেদ মাওলানা ফখরুদ্দীন যারাদী আরয করেন, জনাব! আমাকে অনুমতি দিলে আমি তাকে ছয় মাসে আলেম বানিয়ে দিবো। মীর খোরদ লিখেন যে, মাওলানা যাররাদী সর্বপ্রথম মীযানুসসরফ এবং সরফ শাস্ত্রের অন্যান্য কিতাব শিক্ষা দেন। মাও: যাররাদীর কাছ থেকে প্রাথমিক শিক্ষালাভের পর শায়খ নিযামুদ্দীন (রহ)-এর আরেক বিখ্যাত শিষ্য 'রুকুনুদ্দীন আন্দারপত্তি'-এর নিকট কাফিয়া, মুফাসসাল, কুদুরী এবং মাজমাউল বাহরাইন প্রভৃতি কিতাব অধ্যায়ন করেন। অল্পদিনে তিনি বাহ্যিক ইলমে প্রগাঢ় অর্জন করেন। মুফতী গোলাম সরওয়ার লাহোরী 'খাযীনাতুল আসফিয়া' নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, আলী সিরাজ ছয় মাসে ইলম অর্জন করে এত উচ্চস্তরে পৌঁছেন যে, বড় বড় আলেমগণও তার সাথে বহস, মুনাযারা ও প্রতিযোগিতার দুঃসাহস দেখাতেন না। মুবশিদী জীবন: বঙ্গদেশে তিনি তাঁর জীবনের বাকি সময় অতিবাহিত করেন এবং এদেশে অবস্থানের সময় তিনি যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেন। শত শত আল্লাহপ্রেমিক বান্দা তাঁর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হন। বিশেষ করে শায়খ আলাউল হক পাণ্ডবী তাঁর সুযোগ্য খলিফা ছিলেন। তার বুযুর্গীর সামনে গোটা বাংলার বুযুর্গগণ ছিলেন নতশীর। পরলোকগমন: অবশেষে বঙ্গদেশের গৌরব আরেফে কামেল শায়খ সিরাজুদ্দীন উসমান ৭৫৮ হিজরীতে পরলোক গমন করেন। হিন্দুস্থানের উত্তরবঙ্গে তাঁর মাজার রয়েছে, যা গৌড় নামে অধিক প্রসিদ্ধ।