এক ছিল এক গ্রাম। সাগাইয়া তার নাম। এক ছিল এক নদী। তার নাম মেঘনা। তবে তার কিনারে বসত করা লোকেরা তাকে ডাকতো নিদাইল্লা গাঙ নামে। এক ছিল এক গাছ। কামরাঙা গাছ। আর ছিল এক বালক। নাম তার ওয়ালি মিয়া। অদ্ভুত নামের গ্রামটাতে আছে শুধুমাত্র একটি কামরাঙা গাছ। অদ্ভুত ব্যাপার! অনেক চেষ্টা করেও কেউ তার বীজ থেকে চারা করতে পারেনি। এমনকি গাছটি নিজে থেকে কোনো কালেও দেয়নি কোনো চারা। একদিন গ্রামের চির শান্ত নদীটি, ওই যে নিদাইল্লা গাঙ, হঠাৎই সে অশান্ত আর ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে। নদীটা ভেঙে নিতে থাকে সমস্তটা গ্রাম। পাগল ঢেউয়ের কামড়ে কামড়ে ছিঁড়ে যেতে থাকে গ্রামটার বাড়িঘর, জমিজমা, পথঘাট, গবাদি পশু এবং জাঁকাল—ঝাঁকাল কামরাঙা গাছটিও। তবে নদী—ভাঙনের আক্রমণটা আসার আগে সেই গ্রামে ঘটে একটা আশ্চর্য ঘটনা! কামরাঙা গাছটার বীজ থেকে হঠাৎ জন্মায় একটা চারা। কামরাঙা গাছের একমাত্র বংশধর। সেই চারাটাকে কিনা কামরাঙা গাছটা আমানত হিসেবে রেখে যায় ওয়ালি মিয়ার কাছে; যে ওয়ালি মিয়া তার ছোট্টবেলা থেকেই ওই গাছটাকে ভালোবাসতো। এই যে গল্পটা, এটা ১০০ বছর আগের এক আশ্চর্য রূপকথা। মানুষ ও গাছের মধ্যেকার আত্মীয়তার গল্পকথা এটা। তোমাদের জন্য তোমাদের প্রিয় লেখক আকিমুন রহমানের লেখা ‘চিরকালের এই রূপকথা’। ভালোবাসা দিয়ে সবকিছু জয় করার রূপকথা।
ইনডিপেন্ডেট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ-এ অধ্যাপনারত আকিমুন রহমান পিএইচ ডি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ; আধুনিক বাংলা উপন্যাসে বাস্তবতার স্বরূপ, সােনার খড়কুটো, পাশে শুধু ছায়া ছিলাে, পুরুষের পৃথিবীতে এক মেয়ে, রক্তপুঁজে গেঁথে যাওয়া এ মাছি, এইসব নিভৃত কুহক।