ফ্ল্যাপে লিখা কথা রম্যরচনার কাজটি একটি দুরূহ কাজ। উপাদান গুরু অথচ তা দিয়ে লঘু পাক করতে হবে। অবস্থাটা সহজেই অনুমেয়। বিশ্বের সবচাইতে কঠিন কাজ হলো দর্পনের সাহায্য ছাড়া পরিপার্শ্ব এর মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাওয়া। হানিফ সংকেত সেই দুর্লভ শক্তির অধিকারী। তার প্রতিটি লেখাতেই রয়েছে এক ধরনের আনন্দ আর একরকম মজা। বাংলাদেশ টেলিভিশনে দীর্ঘ এগারো বছর ধরে তার পরিচালনা ও উপস্থাপনা ‘ইত্যাদি’ নামে একটি বিনোদনমূলক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে। নিকট অতীতে আর কোন অনুষ্ঠান এতটা জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। এর কারণ অনুষ্ঠানটিতে রয়েছে সমাজ ও সময়ের নানান জীবন্ত ছবি। চলমান জীবনের অসংগতিগুলোর প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ । রয়েছে রঙ্গ ও ব্যাঙ্গের কষাঘাত । বিদ্রূপ বা কটাক্ষ থাকলেও তার অনুষ্ঠানে আদ্যন্ত আকর্ষণ তার রসালো উপস্থাপনা। ইত্যাদিতে পরিবেশিত বিভিন্ন নাট্যাংশগুলোকে জড়ো করেই এই গ্রন্থ আটখানার পাটখানা। বিষয়গুলো ইতিপূর্বে ইত্যাদিতে প্রচারিত হলেও তার বর্ণনা ভঙ্গির গুনে প্রতিটি বিষয় মনে হবে সদ্যতম, তাজা, নিখুঁত,নিপুন ও জলজ্যান্ত। টেলিভিশনে পর্দায় এক দুবার দেখিয়েই যেন বিষয়গুলো হারিয়ে না যায় সেজন্যই গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা হলো। ইত্যাদি যেমন দর্শকপ্রিয় হয়েয়ে তেমনি সর্বজনভোগ্য, বুদ্ধিদীপ্ত, ঝকঝকে এই সরস গ্রন্থ ‘আটখানার পাটখানা’ও পাঠক প্রিয় হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। সূচিপত্র * আটখানা পাটখানা * বোঝার ভুল * ম্যাচিং সমস্যা * আকাশ পাতাল রিয়েল স্টেট * পরিচয় * ছিনিমিনি খেলা * চাকরি চাই * অ-সুখ * তিন মাহাত্ন্য
জন্ম : ১৯৫৮। জনপ্রিয় গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব । বিবাহিত। দু সন্তানের জনক। স্ত্রী : সানজিদা। পুত্র ফাগুন। কন্যা বর্ণনা। মানুষ দর্পনে নিজেকে খুঁজে পেলেও পারিপার্শ্বিকে নিজেকে খুঁজে পাওয়া কঠিনতম কাজ। হানিফ সংকেত সেই দুর্লভ শক্তির অধিকারী। গভীর পর্যবেক্ষণ, রমনীয় বর্ণনা, ক্ষুরধার বুদ্ধিবৃত্তি তার উপস্থাপিত বিষয়গুলোকে করে তোলে জীবন্ত। প্রতিটি লেখাই তাজা অথচ মজা। সুন্দর-সপ্রাণ। আমাদের সমাজ ও সামাজিক দ্বন্দ্বের স্বরূপ নিয়ে তিনি ভাবেন। তাঁর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও তা উজ্জ্বলভাবে প্রতিফলিত। হানিফ সংকেত উপস্থাপিত ইত্যাদি অনুষ্ঠানটি দর্শক পছন্দের শীর্ষে থেকে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে বিটিভিতে চলছে তার বিষয় বৈচিত্ৰ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও উপস্থাপনার নৈপুণ্যে। তাঁর ইত্যাদি অনুষ্ঠানটিই ১৯৯৪ সালের ২৫শে নভেম্বর বিটিভির প্রথম প্যাকেজ অনুষ্ঠান হিসাবে প্রচারিত হয়। ইত্যাদির প্রতিবেদন যেমন বহুমুখী তেমনি সমাজ সচেতনতায়ও থাকে বহুমাত্রিকতা। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নিবেদিত প্রাণ মানুষের অনুসন্ধানে হানিফ সংকেত ছুটে বেড়ান। সারাদেশে এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তুলে আনেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রচার বিমুখ অনেক সৎ সাহসী, জনকল্যাণকামী, নিভৃতচারী আলোকিত মানুষদের। যাদের অনেকেই পরবর্তীতে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মান। সামাজিক দায়বদ্ধতাকে প্রাধান্য দিয়ে ইত্যাদি এখন সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। দেশে বিদেশে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সমাজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ হানিফ সংকেত ২০১০ সালে পান মর্যাদাকর 'একুশে পদক’। ২০১৪ সালে পেয়েছেন জাতীয় পরিবেশ পদক। বিভিন্ন অসংগতি তুলে ধরে সমাজকে পরিশুদ্ধ করতে তিনি যেমন নিরন্তন কাজ করে যাচ্ছেন তেমনি আমাদের নাগরিক সচেতনতা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেও ভূমিকা রাখছেন আন্তরিকতার সঙ্গে।