পাবলিশারস নোট চিঠি লেখা একটা সময়ে ‘সাহিত্য’ ছিল; এখন তো তেমন কেউ আর কাউরে চিঠি লেখে না, পারসোনাল লেভেলে ‘লাভ লেটার’ বা ‘প্রেম পত্র’ কিছুটা চালু থাকতে পারে, কিনতু সেইটার ‘সাহিত্য মর্যাদা’ও মোটামুটি ‘বাতিল’ হইতে পারছে; ইমেইলে ঠিক চিঠি-লেখার অই ইমোশন নাই বা থাকে না, বরং যে কোন আলাপের ‘স্ক্রিনশট’ ফাঁস হওয়ার ভিতর দিয়া ‘বেইজ্জতি’ হওয়ার চান্স এখন অনেক বেশি; মানে, এইসব জায়গাতে আগের দিনের কনভারসেশন বরং রিটেন ফরমেটে চলে আসছে… যা-ই হোক, আগে রাইটার’রা, কবি-সাহিত্যিকরা যখন চিঠি লিখতেন, সেইটা পুরাপুরি পাবলিক-ঘটনা না হইলেও উনাদের মনে এই ধারনা থাকার কথা যে, কোন সময় এই চিঠি ছাপানো হইতে পারে; চিঠি পারসোনাল জিনিস-ই, কিনতু সেইটার ‘ঐতিহাসিক’ গুরুত্বও তৈরি হইতে পারে, ফিউচারে… চিঠি-লেখাতে এইরকম একটা জায়গা ছিল, বা থাকার কথা একভাবে, যার ফলে এতোটা পারসোনাল ঘটনাও না এইগুলা… তো, এই জায়গা থিকা নজরুলের ৮৮টা চিঠি ছাপা হইছে বা পাবলিক ডেমোইনে এভেইলেবল আছে; এর মধ্যে কিছু জিনিস অফিসিয়াল-লেটার বা পত্র-সাহিত্যই, যা পত্রিকার সম্পাদক বা সভা-সমিতির আয়োজকদেরকে লেখছেন; তবে সবচে বেশি চিঠি লেখছেন কাজী মোতাহার হোসেনকে (অবশ্য চিঠি-তে ফজিলাতুন্নেসা’র কথাই লেখছেন অনেক); ইয়াং-কবিদেরকে কিছু চিঠি লেখছেন; আর সুন্দর দুইটা চিঠি লেখছেন শামসুরনাহার’কে, অইগুলা অনেকটা ‘পত্র-সাহিত্য’; আর এর বাইরে ‘প্রেমপত্র’ বা ‘ঐতিহাসিক গুরুত্ব’ আছে হইতেছে ফজিলাতুন্নেসা ও উনার প্রথম বউ নারগিস আসরার খানম’রে লেখা চিঠি দু্ইটার। উনার এই ১৮টা চিঠি এই বইয়ে ছাপা হইলো। সেপ্টেম্বর, ২০২৪
১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী, সুরকার ও প্রবন্ধকার। নজরুলের বাল্যকাল কেটেছে দুঃখ-দুর্দশায়। তাই তাঁর ডাকনাম ছিলো দুখু মিয়া। তাঁর বৈচিত্র্যময় শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের মক্তবে। পিতৃহীন হওয়ার পর তিনি পড়ালেখা ছেড়ে যোগ দেন লেটোর দলে, যেখান থেকে তিনি কবিতা ও গান রচনার কৌশল রপ্ত করেন। পরবর্তীতে এক বছর ময়মনসিংহের দরিরামপুর হাই স্কুলে পড়ে পুনরায় চুরুলিয়ায় রানীগঞ্জের শিয়ারসোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন, এবং সেখানে তিন বছর অধ্যয়ন করেন। প্রবেশিকা পরীক্ষার আগেই তাকে পড়ালেখা ছাড়তে হয় যুদ্ধে যোগদানের জন্য। যুদ্ধের দিনগুলোতে নানা জায়গায় অবস্থান করলেও তার করাচির সৈনিকজীবনই উল্লেখযোগ্য, কেননা সেসময়েই তার প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় ‘বাউণ্ডেলের আত্মকাহিনী’ নামক গল্প প্রকাশের মাধ্যমে। কাজী নজরুল ইসলাম এর বই সমূহ’র বিষয়বস্তু বিবিধ। তবে কাজী নজরুল ইসলাম এর বই-এ সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক যন্ত্রণা এবং সাম্যবাদের ধারণা প্রকটভাবে স্থান করে নিয়েছে। রাবীন্দ্রিক যুগে তার সাহিত্য প্রতিভা উন্মোচিত হলেও তার সৃষ্টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাজী নজরুল ইসলাম এর বই সমগ্র এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘রিক্তের বেদন’, ‘দোলনচাঁপা’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘সাম্যবাদী’, ‘সর্বহারা’, ‘প্রলয়শিখা’ ইত্যাদি। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নজরুল ‘সাপ্তাহিক লাঙল’, দ্বিসাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ধূমকেতু’র সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।