“শ্রেষ্ঠ কবিতা” বইয়ের ভূমিকা: এই নতুন সংস্করণে বইটি সম্পূর্ণ পরিমার্জিত হয়েছে। আমার এ-পর্যন্ত প্রকাশিত সব কটি কবিতার বই থেকেই কিছু কিছু কবিতা এই সংকলনে স্থান পেয়েছে। এই নির্বাচন পুরোটাই একা করেছেন শ্ৰী দেবাশিস বসু। আমি নিজে বাছাবাছি করলে নিশ্চিত এর অনেক কবিতাই বাদ দিতুম কিংবা শ্রেষ্ঠ আখ্যা দেবার মতন একটা কবিতাও খুঁজে পেতুম না। বর্তমান সংস্করণে আরও দুটি কাব্যগ্রন্থ থেকে নির্বাচিত কবিতা অন্তর্ভুক্ত হলো। এই নতুন সংস্করণে আমি কোনো কোনো কবিতায় সামান্য পরিমার্জনা করেছি,তাই পূর্ববর্তী সংস্করণের সঙ্গে মেলালে কোথাও কোথাও পাঠান্তর চোখে পড়বে। ছাপার ভুলও যথাসম্ভব সংশোধনের চেষ্টা করা হয়েছে। আগেকার সংস্করণগুলির চেয়ে বর্তমান সংস্করণটিতে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে। শুধু নতুন কবিতা সংযোজন নয়, প্রথম দিকের কিছু কিছু কবিতা বাদ দিয়েছি। হয়তো এটা প্রথা সিদ্ধ নয়, কিন্তু কিছু পুরোনো কবিতা আমার আর রাখতে ইচ্ছে হয়নি। কিছু সাম্প্রতিক কবিতাও সংযুক্ত করা সঙ্গত মনে হয়েছে। বর্তমান সংস্করণে সামান্য কিছু অদল-বদল হয়েছে। বর্তমান সংস্করণে আরও তিনটি কাব্যগ্রন্থ থেকে কিছু নির্বাচিত কবিতা অন্তর্ভুক্ত হলো “শ্রেষ্ঠ কবিতা” বইয়ের প্রধান সূচীপত্র: * একা এবং কয়েকজন (প্রথম প্রকাশ: পৌষ ১৩৬৭) – ১৭ * আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি (প্রথম প্রকাশ: মধ্য চৈত্র ১৩৭২) – ২২ * বন্দী জেগে আছো (প্রথম প্রকাশ: ফাল্গুন ১৩৭৫) – ৫৬০ * আমার স্বপ্ন (প্রথম প্রকাশ: বৈশাখ ১৩৭৯) – ৮৪ * সত্য বদ্ধ অভিমান (প্রথম প্রকাশ: বৈশাখ ১৩৮০) – ১০৮ * জাগরণ হেমবর্ণ (প্রথম প্রকাশ: ২৫ বৈশাখ ১৩৮১) – ১১০ * দাঁড়া ও সুন্দর (প্রথম প্রকাশ: ১৩৮২) – ১২৫ * মন ভালো নেই (প্রথম প্রকাশ: আষঢ় ১৩৮৩) – ১৩৬ * এসে ছিল দৈব পিকনিকে (প্রকাশ প্রকাশ: শ্রাবণ ১৩৮৪) – ১৫৪ * দেখা হলো ভালোবাসা বেদনায় (প্রথম প্রকাশ: জৈষ্ঠ ১৩৮৬) – ১৬১ * স্বর্গন গরীর চাবি (প্রথম প্রকাশ: শ্রাবণ ১৩৮৭) – ১৭২ * সোনার মুকুট থেকে (প্রথম প্রকাশ: চৈত্র ১৩৮৮) – ১৮৮ * স্মৃতির শহর (প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩) – ১৯৫ * বাতাসে কিসের ডাক শোনো (প্রথম প্রকাশ: জানুয়ারি ১৯৮৭) – ২০৩ * রাত্রির রঁদেভু (প্রথম প্রকাশ: জানুয়ারি ১৯৯৫) – ২০৮ * সেই মুহুর্তে নীরা (প্রথম প্রকাশ: জানুয়ারি ১৯৯৭) – ২১৫ * ভোর বেলার উপহার (প্রথম প্রকাশ: জানুয়ারি ১৯৯৯) – ২২৫
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।