"অগ্নিবলাকা" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: চেনা লেখককে নতুনতর মহিমায় অম্বিত করেছে ‘অগ্নিবলাকা', আবুল বাশারের এই উচ্চাকাঙক্ষী উপন্যাস। এ-উপন্যাসের প্রেক্ষাপটে রয়েছে সত্তরের দশক। সেই অগ্নিগর্ভ সময়প্রবাহ, যা হতে চেয়েছিল মুক্তির দশক। কিন্তু এরই মধ্যে সহসা এল ১৯৭৫ সালের ২৬ জুন। ঘােষিত হল জরুরি। অবস্থা। বহাল রইল প্রায় একুশমাস। এই একুশ মাসের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতারই এক কৌতুহল-জাগানাে অভিজ্ঞান এই উপন্যাসে। ২৬ জুন ১৯৭৫ থেকে ২১ মার্চ ১৯৭৭- জরুরি অবস্থার শুরু থেকে শেষতম দিনটি পর্যন্ত এক গৃঢ় কালসীমাকে উপন্যাসের আধার করে তােলাটাই অভিনব, সন্দেহ নেই। বলতেই হয়, আবুল বাশারের এই ভিন্ন মাত্রার উপন্যাস আরও অনেক দিক থেকেই অভিনব। ‘অগ্নিবলাকা’র কেন্দ্রে এক জনপদ, সমাজপরিবর্তনকামী রাজনৈতিক শক্তির ঢেউ যেখানে সবে এসে পৌঁছেছে। নায়ক রাহুলের চোখের সামনে তার বাবাকে মরাই থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশের কালাে গাড়ি । এই আকস্মিক ঘটনা কীভাবে রাহুলের চোখ খুলে দেয়, ক্রমশ তাকে টেনে নিয়ে যায় ভারতাত্মার অন্তঃমূল অবধি তাই নিয়েই ‘অগ্নিবলাকা। একদিকে এক অস্বাভাবিক সময়, অদৃর জনপদে। অগ্নি-আন্দোলনের বিলম্বিত সঞ্চার, অন্যদিকে একটি অসহায় সাধারণ পরিবার, একই আদর্শের ছায়ায় লালিত দুই রাজনৈতিক দলের ভিন্নমুখিতা ও অন্তর্দ্বন্দ্ব, প্রেমের রহস্য ও জটিলতায় বিদ্ধ কিছু মানুষ—এরই মধ্য দিয়ে উন্মােচিত হয়েছে তামাম সমাজ-আদর্শ, সময়-গ্রন্থি এবং সমাজ-অন্তস্তলের ইতিবৃত্তি। শুধু বিপ্লবভাবনা ও প্রেমেরই নয়, আত্মত্যাগেরও নতুন এক অর্থ এই অসামান্য উপাখ্যানে, যেখানে আত্মত্যাগ আত্মজনকেও ত্যাগ।
তাঁর জন্ম ১৯৫১ খ্রীস্টাব্দ। ছ-বছর বয়সে সপরিবার গ্রাম তাগ। মুর্শিদাবাদের লালবাগ মহকুমার টেকা গ্রামে বসবাস শুরু। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যের স্নাতক। হিন্দিভাষা-সাহিত্যেরও ডিপ্লোমা। গ্রামের স্কুলে ১০-১২ বছর চাকুরি। বর্তমান কর্মস্থল সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকা। দারিদ্র্যের চাপ আর সামাজিক বিষমতা ও পীড়ন কৈশোরেই লেখালেখিতে প্ররোচিত। উত্তীর্ণকৈশোরে, ১৯৭১ সালে, প্রথমে কবিতাগ্রন্থের প্রকাশ। নাম : ‘জড় উপড়ানো ডালাপা ভাঙা আর এক ঋতু’। পরবর্তী এক দশক লেখালেখি বন্ধ। জড়িয়ে পড়েন সক্রিয় রাজনীতিতে। বহরমপুরের ‘রৌরব’ পত্রিকাগোষ্ঠীর প্রেরণায় লেখালেখিতে প্রত্যাবর্তন। কবিতা ছেড়ে এবার গল্পে। প্রথম মুদ্রিত গল্প-‘মাটি ছেড়ে যায়’। তাঁর ‘ফুলবউ’ উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন ১৩৯৪ সালের আনন্দ-পুরস্কার।