একালের প্রখ্যাত ঔপন্যাসিকদের মধ্যে বিষয়ভাবনার বৈচিত্র্য এবং গদ্যশৈলীর অনন্যতায় দিব্যেন্দু পালিত এক সম্পূর্ণ একক ধারার শিল্পী। পরিবর্তমান সময় ও সামাজিক পরিবেশের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন উপন্যাসের কাহিনীতে তিনি এমনই নতুন সব অভিজ্ঞতা যুক্ত করেছেন যা আগে দেখা যায়নি-যা বাংলা উপন্যাসের ধারাবাহিকতায় যােগ করেছে নতুন মাত্রা। সত্তরের দশকে প্রকাশিত তাঁর ‘আমরা’ বা `বৃষ্টির পরে’, ‘চরিত্র’ বা ‘উড়ােচিঠি’, ‘একা’ বা ‘অহঙ্কার’ ইত্যাদি উপন্যাস বিষয় ও বিষয়ের অন্তর্গত জটিলতার নিপুণ উন্মােচনে একটি অন্যটি থেকে এতই ভিন্ন যে চমৎকৃত হতে হয় এদের সৃষ্টি-সার্থকতায়; যেমন চমৎকৃত হতে হয় তাঁর পরবর্তী পর্বের বহু-আলােচিত ও সমাদৃত ‘সহযােদ্ধা’, ‘ঘরবাড়ি’, ‘সােনালী জীবন’, ‘ঢেউ, অন্তর্ধান’, ‘গৃহবন্দী’, ‘অনুভব’, ‘মৌনমুখর ইত্যাদি উপন্যাসের সিদ্ধিতে। সঙ্গত কারণেই বিদগ্ধ সমালােচকদের দৃষ্টিতে ঔপন্যাসিক দিব্যেন্দু পালিত প্রতিভাত হয়েছেন বিভিন্ন ব্যাখ্যায়। তিনি শুধু হৃদয়বানই নন, বৌদ্ধিক প্রস্তুতিতেও বিশিষ্ট মননশীলতা তাঁকে সামান্য সিদ্ধির আওতায় আটকে রাখেনি। বলেছেন কেউ: তাঁর প্রধান শক্তি আজকের জীবনের নিহিত প্রশ্নগুলিকে সঠিক মাত্রায় হাজির করা। আবার কেউ বলেছেন, তিনি এমন কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন যার বৈচিত্র্য ও সততা সম্বন্ধে আমরা কোনাে প্রশ্ন করতে পারি না। কিংবা, দিব্যেন্দুর ক্ষমতার পরিচয় তাঁর ভাষাসৃষ্টিতে, উপমা নির্বাচনে, চিত্রকল্প রচনায়। ‘দশটি উপন্যাস প্রথম খণ্ডের বিপুল সমাদরের পর ‘দ্বিতীয় দশটি উপন্যাস’ নামে এই সুবৃহৎ ও অভিনব সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ১৯৮৪-১৯৯১ সালের মধ্যে প্রকাশিত দিব্যেন্দু পালিত-এর দশটি সাড়া-জাগানাে উপন্যাস-‘সহযােদ্ধা’, ‘ঘরবাড়ি’, ‘আড়াল’, ‘সােনালী জীবন, ‘ঢেউ’, ‘স্বপ্নের ভিতর’, ‘অন্তর্ধান’, ‘অবৈধ’, ‘সিনেমায় যেমন হয় এবং ‘গৃহবন্দী’। সমগ্রভাবে এই সংকলন যেন এক বিপুল ও ব্যাপ্ত অভিজ্ঞতার চলমান চিত্র—যা পাঠককে বিস্মিত ও মুগ্ধ করে রাখবে।